—প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ দিন পরে করোনা আক্রান্ত রোগীর খোঁজ মিলল মুর্শিদাবাদে। বছর আঠেরোর ওই তরুণ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের একটি গ্রামে। অন্য রোগ নিয়ে ভর্তি ওই তরুণের শ্বাসকষ্টের কারণে বৃহস্পতিবারই চিকিৎসকের পরামর্শে প্রথমে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হয়। তাতে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। পরে আরটিপিসিআরেও রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। বিষয়টি জানতে পারার পরেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে। গুরুতর অসুস্থ ওই রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, মূল রোগ মেনিনগো এনসেফেলাইটিস। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকেও জানানো হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমএসভিপি অনাদী রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই তরুণ মেনিনগো এনসেফেলাইটিস রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার তাঁর করোনা পজ়িটিভ হয়েছে। আমরা সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি।’’ বিষয়টি জানতে পারার পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ওই রোগীর বিষয়ে খোঁজ খবর শুরু করেছে। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ওই তরুণ দিদিমার কাছে থাকতেন। বাড়িতে দিদিমা ছাড়া কেউ নেই। ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজও করতেন। তবে দিন পনেরো আগে কলকাতায় শ্রমিকের কাজ করতেন। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পরে তিনি অসুস্থ হন। তাঁকে ৫-৬ দিন আগে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বর্তমানে তাঁর বাড়ির আশপাশে বা দিদিমা কেউই অসুস্থ হননি বা তাঁদের মধ্যে করোনার কোনও উপসর্গ নেই।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ বলেন, ‘‘ব্রেনে ইনফেকশন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই রোগের চিকিৎসা চলছে। এর মাঝে করোনা পজ়িটিভ হয়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা ভাল নয়। তবে আমরা ওঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কোভিডের প্রোটোকল মেনে যা যা করণীয় তা করা হচ্ছে। যে সব চিকিৎসক নার্স বা অন্য হাসপাতাল কর্মী তাঁর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হয়েছে। তাতে করোনা নেগেটিভ এসেছে।’’
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কেরল, তামিলনাড়ু, কর্নাটকের মতো রাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন উপপ্রজাতি দেখা দিচ্ছিল। সে সময় কেরলে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যুও হয়েছিল। করোনার নতুন উপপ্রজাতি সামনে আসতেই সে সময় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক অন্য রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গকেও সতর্ক করেছিল।
করোনা রুখতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল-সহ জেলার জঙ্গিপুর, কান্দি ও ডোমকল মহকুমা হাসপাতাল ও সাগরদিঘি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি করার বিষয়ে সে সময়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মহড়া করা হয়েছিল। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৮টি শয্যার করোনা রোগীদের জন্য ওয়ার্ড প্রস্তুত রয়েছে। প্রয়োজন হলেই সেখানে রোগী ভর্তি করানো যাবে।
তবে নতুন করে বছরখানেক পরে করোনা পজ়িটিভ রোগী মেলায় উদ্বিগ্ন জেলার বাসিন্দারা। কারণ মুর্শিদাবাদের বহু লোকজনের কলকাতায় যেমন যাতায়াত রয়েছে, তেমনই বহু পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। তাঁরা বাড়ি ফিরলেও করোনা পরীক্ষা হয় না। ফলে উদ্বিগ্ন জেলার বাসিন্দারা।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, এ ভাবে করোনা পরীক্ষার নির্দেশ নেই। তবে বিদেশ যাওয়ার জন্য করোনা পরীক্ষা রিপোর্টের প্রয়োজন হচ্ছে। যাঁরা বিদেশ যাচ্ছেন তাঁরা মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। আবার করোনার উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো করোনা পরীক্ষা করানো হচ্ছে।