১০০ দিনের কাজে ব্যস্ত মহিলারা। — ফাইল চিত্র।
টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের তরফে জবকার্ড হোল্ডারদের ‘বিকল্প’ কাজের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রকৃত ‘বিকল্প’ হয়ে উঠতে পারেনি বলে অভিযোগ। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। ১০০ দিনের কাজ ভোটের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। ফলে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক টানাপোড়েন।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করেছে। এই প্রকল্পে নদিয়া জেলার প্রায় ৬৪ কোটি টাকা পাওনা আছে। জেলার কয়েক লক্ষ পরিবার প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র পরস্পরের উপর দোষারোপ করতে থাকে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জবকার্ড হোল্ডারদের বিকল্প কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০২২ সালের ৩১ নভেম্বর রাজ্যের মুখ্যসচিব জবকার্ড হোল্ডারদের বিভিন্ন দফতরের কাজে যুক্ত করার নির্দেশ দেন।
নদিয়া জেলায় জবকার্ড হোল্ডারদের মূলত পূর্ত দফতরের পাশাপাশি সেচ, মৎস্য দফতরে কাজে ব্যবহার করা শুরু হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৩ জন শ্রমিককে কাজ দেওয়া হয়েছে। শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৬২ দিন। কাজ হয়েছে প্রায় ১১২ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকার।
কিন্তু এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম বলে মনে করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলায় জবকার্ড হোল্ডার রয়েছেন ১৪ লক্ষ ৭৪ হাজার। তার মধ্যে সক্রিয় আছেন ৫ লক্ষ ৩৩ হাজার। কিন্তু বিকল্প কাজ পেয়েছেন মাত্র ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩২৩ জন। অর্থাৎ ১ লক্ষ ৮৬ হাজার লোক কাজ পাননি।
যদিও জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে যে, আগামী দিনে জেলা জুড়ে ‘পথশ্রী’ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে চলেছে। তখন প্রচুর সংখ্যক অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। তখন জবকার্ড হোল্ডার বা শ্রমিকেরা কাজ পাবেন। নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু বলেন, “বিজেপি সরকার ১০০দিনের কাজের প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিয়ে রাজ্যের গরিব মানুষকে ভাতে মারতে চেয়েছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে প্রমাণ করে দিলেন যে, কোনও ভাবেই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারা যাবে না।”
যা শুনে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার মিডিয়া আহ্বায়ক সন্দীপ মজুমদার বলেন, “রাজ্য ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের টাকার হিসেব দেবে না, সেই টাকা দিনের পর তৃণমূল নেতারা লুট করে খাবে, এটা চলতে পারে না। রাজ্য টাকার হিসাব দিতে পারছে না বলেই আজ এই আবস্থা তৈরি হয়েছে।”
কাজ হয়েছে
২০১৭-১৮: ৩১২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা
২০১৮-১৯: ২৪৩ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা
২০১৯-২০: ১৭৮ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা
২০২০-২১: ২৫৬ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা
২০২১-২২: ২৬২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা(কেন্দ্র থেকে টাকা না আসায় চার মাস কাজ হয়নি)
২০২২-২৩: কাজ হয়নি
মোট জবকার্ড
৭ লক্ষ ৬২ হাজার
মোট শ্রমিক
৪ লক্ষ ৭৪ হাজার
মোট সক্রিয় জবকার্ড
৩ লক্ষ ৩৩ হাজার
মোট সক্রিয় শ্রমিক
৫ লক্ষ ৩৩ হাজার
গড়ে প্রায় ২৬ দিন করে কাজ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দাবি