সমাবেশে যাওয়ার ভিড়।
বাস হারিয়ে গিয়েছে, বড় মাপের ভাড়া গাড়িও মিলছে না ক’দিন ধরেই। বুধবার, সন্ধ্যায় কলকাতামুখী ট্রেনে অনেকেরই অভিজ্ঞতা, ‘‘রিজার্ভ সিট দখল হয়ে গিয়েছে।’’ কেন?
ছোট্ট উত্তর, ২১শে জুলাই। মুর্শিদাবাদ আর নদিয়া থেকে দলীয় সমর্থকদের শহিদ দিবসে আসার হিড়িকে দুই জেলার এমনই দশা।
নদিয়া জেলা বাস মালিুক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, তুলে নেওয়া হয়েছে অন্তত শ’দুয়েক বাস। আর মুর্শিদাবাদে সংখ্যাটা আরও বেশি— আড়াইশো। সেই সঙ্গে কয়েকশো গাড়ি। তবে এতেও কুলোবে না। দুই জেলা থেকে হাজার হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থক তাই ট্রেনে রওনা হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেলা নেতারা।
আর তার জেরটা কল্পনা করেই অনেকেই ওই দিন শহরমুখো হওয়া ‘ক্যানসেল’ করেছেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, গত বছর মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ওই সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ৩০ হাজার সমর্থক। এ বছর তা দ্বিগুণ হবে বলেই মনে করছেন জেলা নেতারা।
জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনের অনুমান, এ বার অন্তত এক-দেড় লাখ লোক হবে জেলা থেকে। নদিয়া জেলা নেতৃত্বেরও দাবি, এ বার প্রায় ১ লক্ষ কর্মী সভায় যোগ দেবেন। সেই মতো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে কর্মীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নদিয়ায় ১৮০টি বাস ভাড়া করা হয়েছে। বিশেষ করে করিমপুর, তেহট্ট, পলাশীপাড়া, চাপড়া, হরিণঘাটা এলাকা থেকে সমস্ত কর্মীদের বাসে করে নিয়ে যাওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। কারণ এই সব এলাকায় কোনও রেল যোগাযোগ নেই। তবে যেখানে রেলের সুবিধা আছে, সেখান থেকে বেশির ভাগ কর্মী ট্রেনে চেপেই সমাবেশে যাবেন।
যাবেন তো বটে, কিন্তু কিসে? শহিদ দিবসে দলীয় সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার গুঁতোয় জেলার সাধারণ জনজীবন যে ধাক্কা খাবে তা নিয়ে আড়াল রাখছেন না জেলার নেতারাই। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া ছাড়া আর কী-ই বা করতে পারি!’’ তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত অবশ্য বলছেন, ‘‘নেত্রী পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছেন, মানুষের সমস্যা হয় এমন কোনও কাজ করা যাবে না। তাই তো আমরা চেষ্টা করছি বুধবার রাত থেকেই যত বেশি করে সম্ভব কর্মীকে ট্রেনে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়ার।’’
বাসের বদলে বিভিন্ন ছোট গাড়ি ভাড়া করার উপরে জোর দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ তৃণমূল নেতৃত্ব। যেমন ডোমকল-জলঙ্গি থেকেই দু’শোরও বেশি ছোট গাড়ি ভাড়া করা হয়েছে বলে রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিক হোসেন জানান। তিনি বলেন, ‘‘ডোমকল-জলঙ্গি এলাকা থেকে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ছোট গাড়িতে করে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস তুলে নিলে জেলার মানুষের সমস্যার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।’’ কিন্তু ওই এলাকা থেকেই অন্তত দেড়শো বেসরকারি বাস ভাড়া করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে সবাই তো লোক নিয়ে গিয়ে দিদির কাছে নিজের নম্বর বাড়াতে চায়, সমস্যা বাধে সেখানেই।’’
তবে, মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সংগঠন ‘ফেডারেশন অব বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর পক্ষ থেকে রথীন মণ্ডল বলেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের জন্য বাসের চাহিদা যতটা তাকবে বলে মনে করা হয়েছিল, ততটা নেই।’’
মুখে তিনি বলছেন বটে, তবে দলের এক নেতা জানাচ্ছেন, ‘‘আজ, বৃহস্পতিবার জেলায় বাস যে প্রায় থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।’’