প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের কাজে বেশ কয়েক লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠল কল্যাণী ব্লকে। এ ব্যাপারে দিন কয়েক আগে মদনপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা কল্যাণীর বিডিও ও মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারীরা জানাচ্ছেন, তাঁরা জানতেনই না গত অর্থবর্ষে তাঁদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ওই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তাঁদের জব কার্ড সংযোগ করানোও হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দিন আগে এলাকারই বাসিন্দা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নারায়ণ হালদার এলাকার লোকজনকে জানান। তারপরে তাঁরা ব্লক ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। অভিযোগপত্রেও নারায়ণ তদন্ত চেয়ে সই করেছেন।
অভিযোগকারীদের কয়েক জন জানাচ্ছেন, গত অর্থবর্ষে তাঁরা পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করতে। সেখান থেকে জানানো হয়, ওই প্রকল্পে পুকুর খনন-সহ অন্যান্য কাজ করবে ব্লক প্রশাসন। তার পরে তাঁরা আর ব্লকে যাননি। ফলে কাজও পাননি। কিন্তু একশো দিনের কাজের ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাটি করতে গিয়ে নারায়ণ দেখেন, তাঁর এলাকার বহু লোক গত অর্থবর্ষে কাজ করেছেন। শুধু তাই নয় গড়ে ২০ হাজার টাকা করে তাঁদের অ্যাকাউন্টে জমাও পড়েছে। কিন্তু সে বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানেন না। এক অভিযোগকারী জানাচ্ছেন, তিনি কোনও দিনই একশো দিনের কাজ করেননি। আর যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, তার দোরগোড়াতেও তিনি কখনও যাননি। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, তাঁর নামে খোলা অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। কে অ্যাকাউন্টে খুলল আর কে বা কারা কী ভাবে ওই টাকা তুলে নিল তা বুঝতেই পারছেন না ওই অভিযোগকারী।
আর এক অভিযোগকারী গোবিন্দ হালদার বলছেন, ‘‘আমার ছেলে তো পুলিশের চাকরি করে। সে কখনই একশো দিনের কাজের ধারেকাছে যায়নি। তবুও ২০১৯ সালের শেষের দিকে দেখানো হচ্ছে আমার ছেলে ৭৯ দিন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেছেন। এর জন্য ছেলের নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫ হাজার টাকা জমা পড়েছে।’’
নারায়ণ জানাচ্ছেন, অভিযোগপত্রে প্রথম যে ছয় জনের নাম উল্লেখ রয়েছে তাঁরা সকলেই অনেক দিন আগে মারা গিয়েছেন। অথচ মৃত লোকের নামে জব কার্ড ও অ্যাকাউন্ট বানিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওই সব লোকের মৃত্যুর প্রমাণপত্রও রয়েছে। প্রশাসনের উচিত ওই সব ভুয়ো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া এবং কারা কী ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করল তা তদন্ত করে দেখা।
কল্যাণীর ব্লকের অধীন কর্মরত একাধিক কর্মীও জানাচ্ছেন, আসলে এই ব্লকে একশো দিন-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ আত্মসাৎ করার একটা চক্র রয়েছে। ওই চক্র অসৎ কর্মী ও আধিকারিকদের সঙ্গে একশো দিনের কাজের স্কিম তৈরি করিয়ে নেয়। তারপরে মূলত পুকুর কাটার ওই স্কিমের এলাকায় মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হয়। সেখানকার মাটি বিক্রি হয় চড়া দরে। আর ভুয়ো শ্রমিক দেখিয়ে পারিশ্রমিকও তুলে নেওয়া হয়। এই চক্র বেশ কয়েক বছর আগে চাকদহ ব্লকে সক্রিয় ছিল। এখন তা অনেক জায়গাতেই ছড়িয়ে পড়েছে।
মদনপুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কুমুদ সরকার বলছেন, ‘‘গত বছরে একশো দিনের প্রকল্পের পুরো কাজটাই করিয়েছিল ব্লক প্রশাসন। ফলে অভিযোগের বিষয়ে ওরাই ভাল বলতে পারবে। তবে আমিও এ ধরনের বহু অভিযোগের কথা শুনেছি।’’
কল্যাণীর মহকুমাশাসক ধীমান বারুই বলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত অভিযোগ দিন কয়েক আগে পেয়েছি। তবে ওই অভিযোগ আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সেই মতো তদন্ত কমিশন গড়া হয়। কমিটি প্রাথমিক রিপোর্টও জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’