ফাইল চিত্র।
তিনি কেরলে কাজে গিয়েছিলেন। ফেরার কথা ছিল দিনকয়েক আগেই। কিন্তু বন্যার কারণে ফিরতে তাঁর দেরি হয়ে গিয়েছে। বহু কষ্টে, বুক-জল ঠেলে ট্রেন ধরে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছন মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। সেখান থেকে শিয়ালদহ হয়ে রাতের ট্রেনে লালবাগ স্টেশনে নামেন ইসলামপুরের জামাল শেখ।
কিন্তু এত রাতে তিনি বাড়ি ফিরবেন কী করে?
নিরুপায় জামাল স্টেশন লাগোয়া কুমারপাড়া জুম্মা মসজিদে আশ্রয় নেন। বুধবার সকালে লালবাগেই ইদের নমাজে শরিক হন তিনি। নমাজ শেষ। এ বার ইমাম কেরলের পাশে থাকার আবেদন করে বলেন, ‘‘ভাইসকল, কেরলের বিপদের কথা আপনারা সবাই শুনেছেন। আপনারা যে যেমন পারেন, সাহায্য করুন।’’
জামাল পকেট থেকে বের করেন মানিব্যাগ। পকেটে পড়ে রয়েছে সাকুল্যে দু’শো টাকা। কেরলে গত কয়েক দিন ধরে কাজ মেলেনি। টাকা সব ফুরিয়ে গিয়েছে। বাড়ির কারও জন্য কিচ্ছু কেনাও হয়নি। অথচ জামাল বাড়ি ফেরার ভাড়া আর পরিবারের জন্য মিষ্টি কিনবেন বলে একশো টাকা নিজের কাছে রেখে বাকি একশো টাকা তিনি দিয়ে দেন কেরলের জন্য।
জামাল বলছেন, ‘‘আমার কাছে আরও টাকা থাকলে সেটাও দিয়ে দিতাম। কেরল তো আমাদের দ্বিতীয় ঘর। সেখানে কাজ করেই আমাদের সংসার চলে। অথচ গোটা এলাকা চোখের সামনে ভেসে গেল। কবে আবার সেই চেনা জায়গাটা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে, জানি না। তাই ইমাম যখন কেরলের পাশে থাকার কথা বললেন, আমি আর কিছু ভাবিনি।’’
জামালের কথায়, ‘‘বিপদের সময়ে কেরলের মানুষ যে ভাবে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সেই ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না। ফলে সারা জীবনে কেরলের জন্য কিছু করতে পারলে সব থেকে বেশি খুশি হব আমি নিজে।’’
জামাল একা নন, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এ ভাবেই কেরল ফেরত বহু শ্রমিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন ইমামদের আবেদনে। জেলার ইমাম সংগঠনের কর্তাদের দাবি, জেলা জুড়ে ইদের ময়দানে এ দিন কয়েক লক্ষ টাকা উঠেছে কেরলের জন্য।
অল ইন্ডিয়া ইমাম মোয়াজ্জেম অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের মুর্শিদাবাদ জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক লালবাগের কুমারপাড়া জুম্মা মসজিদের ইমাম। তিনি বলেন, ‘‘‘মানুষ সাহায্যের হাত বাড়াবে জানতাম। কিন্তু কেরল থেকে নিঃস্ব হয়ে ফেরা মানুষও যে এ ভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন, ভাবিনি।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলেন, ‘‘এ দিন ইমামেরা কেরলের জন্য যা করেছেন তার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ।’’