অঙ্কন: কুনাল বর্মণ
নীচের তলাটা বামেদের, উপরটা কংগ্রেসের! চৌত্রিশ বছরের বাম রাজত্বে মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে এটা বেশ চালু লব্জ ছিল।
পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ, কিংবা বিধানসভা-লোকসভায় জনপ্রতিনিধি পাঠানোর প্রশ্নে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে থাকা জেলাতে শিক্ষায়তনের ধাপগুলিতে দাপট দেখা যেত বামেদের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের। পালাবদলের আগে পর্যন্ত এই নিয়মের তেমন হেরফের হয়নি। কলেজগুলিতে নিয়মমাফিক নির্বাচন থমকে গিয়েছিল হয়ত কিন্তু দখলদারি ছাড়েনি বামেরা। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের লড়াই একটা ছিল বটে, কিন্তু অধিকাংশ কলেজেই নির্বাচন শেষে ছাত্রছাত্রীদের ইউনিয়ন রুমে উড়ত লাল পতাকা।
আট বছর আগে পালাবদলের পরে সেই ছবিটাই বদলে গিয়েছিল আমূল। লাল তো বটেই ছাত্র পরিষদের দখলে থাকা কলেজ ইউনিয়নগুলিও নিঃশব্দে সরে গিয়েছিল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র দিকে।
কলেজ নির্বাচন ফের স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে গত তিন বছরে। কিন্তু সেই চেনা চিত্র, দখলদারিতে রয়ে গিয়েছে টিএমসিপি। তা নিয়ে হইচই থিতিয়ে এসেছিল, কিন্তু আচমকা প্রশ্নটা যেন ফের বুজকুড়ি কাটতে শুরু করেছে— ছাত্রদের মধ্যে কি ফের বামপন্থার উন্মেষ ঘটছে?
প্রশ্নটা উস্কে দিয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে প্রায় দু’শো কিলোমিটার দূরের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের প্রত্যাবর্তন। সপ্তাহ খানেক আগে, কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে, ভরা বাম জমানার একটা বিকেল যেন টুপ করে খসে পড়েছিল! এসএফআই ছাত্র সংসদ দখলের পরে কলকাতার সেই বিকেলের ছায়া কি পড়তে চলেছে একদা কংগ্রেসের গড় মুর্শিদাবাদেও? এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাস আশাবাদী, ‘‘ফিরব, আমরাই ফিরব দেখবেন। এই ক’বছরে টিএমসিপি কলেজগুলিতে যে ভাবে টাকা তুলেছে, অপসংস্কৃতি ছড়িয়েছে তাতে ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। প্রেসিডেন্সি আমাদের সেই পথ দেখিয়েছে!’’ টিএমসিপি’র জেলা সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার পাল্টা জানিয়ে রাখছেন, ‘‘আমরা সারা বছর ছাত্রদের সঙ্গে থাকি, প্রেসিডেন্সি অনেক দূর। দেখবেন ফের টিএমসিপি’ই ফিরবে।’’
মুর্শিদাবাদে ২৩টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। তিন বছর আগে, ১৫টি কলেজে নির্বাচন হয়েছিল। সব ক’টিই গিয়েছিল টিএমসিপি’র দখলে। তবে সিপি এবং এসএফআইয়ের অভিযোগ ছিল— নির্বাচন মুখেই। শাসক দলের ছাত্র নেতারা ওখানে বিরোধীদের দেখলেই মারধর করে কলেজ ছাড়া করেছিলেন।
তবে, পালাবদলের আগে, ২০০৯ সালে এসএফআই যেখানে ৯টি কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করেছিল, সেখানে ছাত্র পরিষদের দখলে ছিল ৬টি কলেজের ছাত্র সংসদ। ছবিটা পরের বছরও প্রায় একই ছিল। ২০১১ সালে বামেদের পতনের পরে অবশ্য ছবিটা বদলে গিয়েছিল।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলছেন, ‘‘কলেজে দখলদারির শুরু বাম আমলে। তৃণমূল তা পূর্ণতা দেয়।’’ সন্দীপন বলছেন, ‘‘ইতিহাসটা ভাল করে পড়ুন, দেখবেন শিক্ষায়তনে কারা প্রথম সন্ত্রাস ছড়িয়েছিল। বাম আমলে দখলদারি থাকলে ছাত্র পরিষদ পাঁচ-ছ’টি ছাত্র সংসদ দখল করত কি?’’