সেই বাড়ি। নিজস্ব চিত্র
করিমপুর জামতলা মোড়ের প্রায় তিনশো মিটার দক্ষিণে দোতলা বাড়ি। তার সামনে দিন-রাত বহু মানুষের জটলা লেগে থাকত এই ক’দিন। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে সেখানেই যেন শ্মশানের স্তব্ধতা।
বাড়িটি করিমপুরে বিজেপির কার্যালয়। উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর দিন সকালে সেই অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেল, বিজেপি দলের কোনও চিহ্ন রাখা হয়নি। বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা জয়প্রকাশ মজুমদারের ছবির লাগানো হোর্ডিং সব খুলে ফেলা হয়েছে। লোহার সিঁড়ি বেয়ে উঠে গিয়ে দেখা গেল, উপরের প্রধান গেটে তালা ঝুলছে। গেটের ভিতরে ঘরের দরজায়ও তালা মারা।
অথচ, গত প্রায় চব্বিশ দিন আগে এটিই ছিল বিজেপি তথা বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের নির্বাচনী কার্যালয়। এ বাড়ির দোতলার সেই অফিসেই কম্পিউটার নিয়ে নির্বাচনের যাবতীয় কাজ সামলাতেন জয়প্রকাশের ছেলে যশপ্রকাশ। ভোটের প্রচারের পাশাপাশি প্রার্থী নিজেও সেখানে বেশির ভাগ সময় থাকতেন। কথা বলতেন এলাকার বিজেপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। ভোটের প্রচারে ব্যবহৃত দলের ফ্ল্যাগ-ফেস্টুনের মতো যাবতীয় সরঞ্জাম এখান থেকেই সরবরাহ করা হত করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের বিজেপি কর্মীদের মধ্যে।
নির্বাচনী প্রচারে আসা বিজেপির সব নেতৃত্বই এই অফিসে গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মুকুল রায়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, তমনই রয়েছেন ভারতী ঘোষ ও রাজ্যের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। বিজেপি দলের পক্ষ থেকে এই পার্টি অফিসের পাশেই একটি ফাঁকা জায়গায় লঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল। সেখানে বড় বড় হাঁড়ি-কড়াইয়ে দিনভর রান্নাবান্না চলত। প্রতি দিন দলের প্রায় কয়েকশো নেতা-কর্মী তিন বেলা সেই রান্না-করা খাবার খেতেন। শুক্রবার সেখানেও কিছু দেখা যায়নি।
নির্বাচনী কার্যালয়ের প্রায় পঞ্চাশ মিটার দূরেই একটি বাড়িতে থাকতেন প্রার্থী জয়প্রকাশ। স্নান, বিশ্রাম কিংবা রাতের ঘুম সেখানেই সারতেন। মুকুল থেকে কৈলাস— সকলেই এক বারের জন্য হলেও প্রচারে এসে এই বাড়িতে উঠেছেন। অথচ, আজ সেখানে কেউ নেই। খাঁ-খাঁ করছে গোটা বাড়ি।
বৃহস্পতিবার ভোটের ফল ঘোষণার পরেই সন্ধ্যাবেলা জয়প্রকাশ এই বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় রওনা দিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, উপ-নির্বাচনের জন্য দলীয় অস্থায়ী নির্বাচনী কার্যালয় হিসাবে এবং প্রার্থীর থাকার জন্য এই বাড়ি দু’টি নেওয়া হয়েছিল। ভোট ফুরিয়েছে। তাই বাড়িও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জয়প্রকাশের বদলে বিজেপির স্থানীয় কোনও প্রার্থী হলে তাঁর থাকার জন্য বাড়ির দরকার পড়ত না। কিন্তু নির্বাচনী কার্যালয়ের জন্য দলকে একটি বাড়ি নিতেই হত।
নদিয়া জেলা উত্তরের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক নিলয় সাহা বলেন, ‘‘জয়প্রকাশবাবু সামনের সপ্তাহে আবার আসবেন। তিনি শুধু তো প্রার্থী নন, বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতিও। এই নির্বাচনের দায়িত্ব মুকুল রায়ের সঙ্গে সঙ্গে ওঁরও ছিল। এখানে যদি অন্য কেউ প্রার্থী হতেন, তা হলেও তিনি আসতেন।’’ তবে তিনি জানাতে ভোলেননি— এখানে বিজেপির ভোট আগের তুলনায় বেড়েছে।
ভোট মিটেছে। ফাঁকা পড়ে রয়েছে দোতলা বাড়ি। কিন্তু অঙ্ক কষা এখনই থামছে না।