ডেঙ্গির দোসর এখন ‘স্ক্রাব টাইফাস’!
সাধারণ লোকজন তো বটেই, এই রোগ এখন মাথাব্যথা বাড়িয়েছে চিকিৎসকদেরও। শুক্রবার বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘স্ক্রাব টাইফাস’-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তরুণ সরকার (৩৩) নামে এক যুবকের। তাঁর বাড়ি মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম থানার অমরকুণ্ডু গ্রামে।
গত ১৩ নভেম্বর কলকাতায় স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে মুর্শিদাবাদের ডাঙাপাড়ার
মহাদেব মণ্ডলেরও।
ধুম জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা নিয়ে ২০ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের গোকর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন তরুণ। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রথমে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে বহরমপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। সেখানেই শুক্রবার বিকেলে মারা যান ওই যুবক। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিখেছেন, ‘স্ক্রাব টাইফাস— মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর।’
তরুণের বাবা উত্তম সরকার বলছেন, ‘‘১৫ দিন ধরে ছেলেটা জ্বরে ভুগছিল। ভেবেছিলাম, ঠান্ডা লেগে জ্বর হয়েছে। কিন্তু রক্ত পরীক্ষার পরে জানতে পারি রক্তে জীবাণু রয়েছে। কিন্তু কী কারণে রক্তে জীবাণু, তা স্পষ্ট ভাবে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানাননি। সামান্য জ্বর থেকে এ ভাবে ছেলেটা অকালে ছেলেটা গেল!’’
পরিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, তরুণকে প্রথমে স্থানীয় এক গ্রামীণ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে দেখিয়েও জ্বর কমেনি। তার পরেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় গোকর্ণ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
তরুণের বাবা উত্তমের অভিযোগ, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব না দেওয়ার কারণেই ছেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। শেষ মুহূর্তে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার কারণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শয়ে-শয়ে রোগী আসছেন জ্বর নিয়ে। কিন্তু স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত কি না জানতে রক্তের যে পরীক্ষা করানো দরকার, সেই কিট মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেই বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে ওই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবং আরও কোনও রোগীর মৃত্যু হয়েছে কি না তা জানাতে পারেননি মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার তথা সহ-অধ্যক্ষ দেবদাস সাহা বলছেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষার কিট যে নেই সেটা আমি জানি না।’’
তবে বহরমপুরের বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে গত দু’মাসে প্রায় ৫০ জনের শরীরে স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু মিলেছে বলে জানা গিয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘যাঁরা খেত-খামারে কাজ করতে যান, তাঁদের পোকার কামড়ে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে এলাকার মানুষকে ‘স্ক্রাব টাইফাস’ নিয়ে সচেতন করা হবে। বাড়ির আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখা জরুরি।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বছর দুয়েক হল ধরা পড়েছে ‘স্ক্রাব টাইফাস’। আমরা চিকিৎসার উপরে জোর দিচ্ছি। সাধারণ ভাবে পতঙ্গবাহিত রোগ হিসেবে ধরা না পড়লে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে স্ক্রাব টাইফাসের চিকিৎসা শুরু করার কথা সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছে। আক্রান্ত হলে রোগীদের হাসপাতালে আসতেই হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকদের অনেকেরই এই রোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল না। এ নিয়ে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে সচেতন করার ব্যাপারে এখনও সে ভাবে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি।’’ রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তার সংযোজন, ‘‘মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্ক্রাব টাইফাসের রক্ত পরীক্ষার কিট কেন নেই তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’