জমি ফাঁকা করা শুরু, বিতর্ক

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই সোমবার বড়জাগুলি মোড় থেকে জমি ফাঁকা করার কাজ শুরু হবে।

Advertisement

সুস্মিত হালদার ও সৌমিত্র সিকদার 

কৃষ্ণনগর-রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর আজ জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য অধিগৃহীত জমি ফাঁকা করার কাজে হাত দিতে চলেছে প্রশাসন।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমেই সোমবার বড়জাগুলি মোড় থেকে জমি ফাঁকা করার কাজ শুরু হবে। যে সব জমিদাতা টাকা নেননি তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি এ দিন অভিযান চলাকালীন পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। কারণ, সমস্যার মেঘ এখনও জমে রয়েছে। মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। জমির দাম কম দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন বেশ কিছু জমিদাতা ।

বিক্ষুব্ধ জমিদাতাদের দাবি, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি দান করে তাঁরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ ব্যাপারে আবার আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছে ‘অনগ্রসর জনজাগরণী মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জমি দিয়ে তাদের সদস্যদের অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিন্তু, মানুষের কাছে তাঁদের বিষয়ে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় সভা করছেন।

Advertisement

তাঁদের দাবি, কেউ জমি দখল করে নেই। তাঁরা জমির মালিক। জমিদাতাদের সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। অনেককে জমির যথাযথ দাম দেওয়া হয়নি। দাম না-দিয়ে জমিতে মাটি ফেলে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে এলাকার প্রভাবশালীদের কাজে লাগানো হয়েছে, যাতে ভয়ে কেউ সঠিক দাম চাইতে না-পারেন। যাতে প্রতিবাদ করতে না পারেন। সত্যকে চাপা দিয়ে তাঁদের জবরদখলদারী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে।

যদিও এই দাবি মানতে নারাজ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলছেন, “নির্দিষ্ট আইন মেনে জমির মূল্য ধার্য করা হয়েছে। সেই মতো সকলে টাকা নিয়েছেন। যাঁরা এখনও টাকা নেননি তাঁদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি।”

প্রশাসনের দাবি, যে তারিখে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় তার আগে তিন বছরে এই মৌজায় জমি কোন দামে বিক্রি হচ্ছে সেটা দেখে নিয়ে সেই মতো প্রথমে দাম ধার্য করা হয়। তার পর তা পাঠানো হয় রেজিস্ট্রেশন দফতরে ‘ইন্সপেক্টর অফ জেনারেল’-এর কাছে। সেখান থেকে রাজ্য একটা জমির দাম ধার্য করে দেয়। এই দুই দামের মধ্যে যে আর্থিক মূল্য বেশি সেটাই জমির দাম হিসাবে ধার্য করে হয়। পরে কোথাও-কোথাও আর্বিট্রেশন করেও জমির দাম বেড়েছে। শুধু তাই নয়, কোন জমির চরিত্র কী হবে তা দেখা হয় বিজ্ঞপ্তি জারির সময়। পরে জমির চরিত্র বদলে দিলেও দামের কোন পরিবর্তন হয় না।

হরিণঘাটা ও চাকদহে যাঁরা এখনও টাকা নেননি তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অতিরিক্ত জেলা শাসক(ভূমি ও ভূমি সংস্কার)। টাকা নেননি এমন জমিদাতার সংখ্যা প্রায় পাঁচশো। আর বেআইনি ভাবে জমি দখল করে রয়েছেন প্রায় ৯০০ লোক। জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলছেন, “রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ এ বার শুরু করতে হবে। সেই মতো প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। দুই পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।” ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার কৃষ্ণনগর প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিটের প্রকল্প অধিকর্তা সৌতম মন্ডল বলছেন, “প্রায় ৯৯ শতাংশ টাকা আমরা জেলা প্রশাসনকে দিয়ে দিয়েছি। সম্প্রসারণের কাজ শুরু করার জন্য আমরা প্রস্তুত। জমি ফাঁকা পেলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।”

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ও সিপিএম জানিয়ে দিয়েছেন যে, তারা রাস্তা সম্প্রসারণ চায়। তবে ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সঠিক ক্ষতিপূরণ পান সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আর তৃণমূল আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা সাংগঠনিক ভাবে জমিদাতাদের সঙ্গে কথা বলছে যাতে কোনও সমস্যা না হয়। তারা চাইছে, আইনানুযায়ী পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement