—প্রতীকী চিত্র।
ভূত তাড়ানোর সর্ষে। কিন্তু ভূত যে সেই সর্ষের মধ্যেই সেঁদিয়ে, ক’জনই বা তা জানত?
খাস উত্তর কলকতার সুশোভন মিত্র গর্ব করে বলতেন, ‘‘বুঝলে ভায়া, আমি আবার ওই ব্র্যান্ডের ঘি ছাড়া পাত পাড়ি না। একে দীর্ঘদিনের চেনা। তাই খুন করা সুগন্ধ।’’
সিআইডি শান্তিপুর ফুলিয়ায় হানা দিয়ে যে ভেজাল ঘি বাজেয়াপ্ত করেছে, তার মধ্যে সুশোভনবাবুর সেই বিশেষ ‘ব্র্যান্ড’-এর ঘি লেভেলও মিলেছে। ফলে, শুধুমাত্র সস্তার ঘি-ই ভেজাল, আর নামি সংস্থার ঘি চোখ বুঝে পোলাওয়ের হাড়িতে উপুড় করা যায়, এই বিশ্বাসটাই ঘা খেয়েছে জাল ঘি বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরে।
দীর্ঘদিন ধরে কার্যত প্রকাশ্যেই চলছিল জাল ঘিয়ের রমরমা কারবার। কিন্তু জেলা পুলিশ নাকি কিছুই জানতে পারেনি! ফুলিয়ার বাসিন্দারা বলছেন, স্থানীয় পুলিশ দেখেও দেখেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তার পিছনে নাকি কারণও ছিল।
দিব্যি জমজমাট এলাকা। ঘরের সামনের রাস্তায় সবসময় নিত্যি যাতায়াত মানুষের। এক সময় দুধ জ্বাল দিয়ে ক্রিম তৈরি করে সেই ঘরেই তৈরি হত সুগন্ধি ঘি। এক সময় পুরো এলাকা ম-ম করত ঘিয়ের গন্ধে। পরে দুধে জ্বাল দেওয়ার পাট ক্রমে উঠতে থাকে। তার বদলে শুরু হয় রাসায়নিকের কেরামতি। ঘি তৈরি হচ্ছে, কিন্তু ক্রিমের দরকার পড়ছে না। সামান্য ক্রিম দিয়ে যৎসামান্য ঘি তৈরি করে। সেই ঘিয়ে মিশছে পামতেল, বনস্পতি আর তার সঙ্গে পশুর চর্বি। তাতে ঘি তো তৈরি হল, কিন্তু অমন গন্ধ? সেটা কেমিক্যাল বা রাসায়নিকের কেরামতি।
ফুলিয়ায় ঘিয়ের ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। এলাকার প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন ঘোষ সম্প্রদায়ের মানুষ ঘিয়ের ব্যবসায় সুনাম অর্জন করতে থাকে। তাদেরকে ঘিয়ে ফুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর মানুষ গরু পালন করতে শুরু করেন। বাড়তে থাকে দুধের ব্যবসাও।
ফুলিয়ার ঘি প্রথম দিকে কোনও মোড়ক ছাড়াই কলকাতায় বিক্রি হত। স্বাদে গন্ধে মাত করা সেই ঘিয়ের সুনাম ছড়াতে দেরি হয়নি। ছবিটা আচমকাই বদলাতে শুরু করে বছর পাঁচেক আগে। ফুলিয়ার ঘিয়ে নজর পড়ে বড় কোম্পানিগুলির।
তারা ফুলিয়ার ঘি প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করে। প্রথম দিকে তারা সঠিক দাম দিয়েই উন্নত মানের ঘি কিনতে শুরু করে। ফুলিয়ার ঘি বিক্রেতাদের বক্তব্য, প্রচুর ঘিয়ের বরাত পেলেও অত ক্রিমের যোগান ছিল না। তখন ঘি কোম্পানিরাই নাকি তাদের ভেজাল ঘি সরবরাহের প্রস্তাব দেয়। তবে তাদের সেই দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা সিআইডি জানতে পারেনি। তবে স্থানীয় কিছু দুধ বিক্রেতার বক্তব্য, প্রস্তাবটা কাদের সেটা বড় কথা নয়। তবে ঘি যে ভেজাল, তা ঘি কোম্পানিগুলি বিলক্ষণ জানত। ফলে তারা দায় এড়াতে পারে না।
মুর্শিদাবাদের শক্তিপুর, বাজারপাড়া, হরিহরপাড়া এলাকাতেও প্রচুর পরিমাণে নকল ঘি তৈরি হচ্ছে। ঘি তৈরি করতে যে ক্রিমের দরকার হয় আসছে বিহার থেকে। জেলার দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতিগুলির দাবি, প্রশাসন অবিলম্বে এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা উচিত।