বৃহস্পতিবার সাত সকালে বহরমপুরের সোনাপট্টি বাজারে টাস্ক ফোর্সের হানা। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
পেঁয়াজের কারণে রান্নার রং, স্বাদ, গন্ধ বেড়ে যায়। তাই তো রাঁধুনিরা বলেন পেঁয়াজ ছাড়া আবার আমিষ খাবার রান্না হয় নাকি! মাছ, মাংস কিংবা যে কোনও আনাজ রান্না করতে গেলে যেমন পেঁয়াজের প্রয়োজন হয়, তেমনই ঝালমুড়ি থেকে ঘুগনি, পাপড়ি চাটের মতো মুখরোচক খাবারেও পেঁয়াজ লাগে। হাল আমলের বার্গার, স্যান্ডউইচেও পেঁয়াজ লাগে। আবার স্যালাডে যেমন শসা, গাজর, টম্যাটোর সঙ্গে পেঁয়াজের উপস্থিতিও জরুরি। তেমনই বাঙালির হেঁসেলে নানা পদ তৈরিতে আলুর উপস্থিতিও জরুরি। আলু থেকে যেমন নানা পদ তৈরি করা যায়, তেমনই মাছ, মাংস থেকে শুরু করে বিভিন্ন তরকারিতেও আলুর প্রয়োজন হয়। আর আলু পেঁয়াজ, শসা, টম্যাটো-সহ বিভিন্ন আনাজ কিনতে গিয়ে চোখে জল আসছে মধ্যবিত্তের।
জেলার কৃষি দফতর জানাচ্ছে, রাজ্যের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদক জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম হল মুর্শিদাবাদ। মাঠ থেকে পেঁয়াজ ওঠার সময়ে জলের দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন এই জেলারই কৃষকেরাই। প্রায় প্রতি বছর পেঁয়াজ মাঠ থেকে ওঠার সময়ে ৫-৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন কৃষকেরা। কোনও কোনও বছর পেঁয়াজ দু’টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। এর আগে নওদা, হরিহরপাড়ার পেঁয়াজ উৎপাদকেরা দাম বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচিও করেছেন।
এখন সেই পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত কয়েক দিন থেকে বহরমপুরের মহকুমাশাসক শুভঙ্কর রায়ের নেতৃত্বে বহরমপুর শহরের বিভিন্ন আনাজ বাজারে অভিযান চলছে। বৃহস্পতিবারও বহরমপুরের মধুপুর, ইন্দ্রপ্রস্থ, সোনাপট্টি-সহ বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়েছেন। কোনও কোনও ব্যবসায়ী কিছু কিছু আনাজের দাম বেশি নিচ্ছেন বলে তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সোনাপট্টি বাজারে আসা ক্রেতা দিলীপ দত্ত বলেন, ‘‘পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হচ্ছে। পটল কিনতে পয়সা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ রকম চললে মধ্যবিত্ত খাবে কী? আমাদের একটাই দাবি বাজারে আনাজের নিয়ন্ত্রণ করুক প্রশাসন।’’ সোনাপট্টি বাজারের খুচরো আনাজ ব্যবসায়ী আবু তাহের বলেন, ‘‘পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি। চন্দ্রমুখী আলু ৪০ টাকা কেজি এবং চাপাডাঙার আলু ৩৫ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামে কিনছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’’
তবে বহরমপুরের মহকুমাশাসক শুভঙ্কর রায় বলেন, ‘‘আমরা ১১ জুলাই থেকে শহরের বিভিন্ন বাজারে ঘুরছি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। ওজন করার যন্ত্রপাতি ঠিক রয়েছে কি না দেখছি। কিছু কিছু বিক্রেতা কিছু আনাজের দাম বেশি নিচ্ছেন। তাঁদের যেমন সতর্ক করা হচ্ছে, তেমনই তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফের অভিযানে আসা হবে।’’
তাঁর দাবি, ‘‘সুফল বাংলার স্টলে ন্যায্য দামে আনাজ বিক্রি হচ্ছে। সুফল বাংলার চলমান দোকান করা যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদে শীত ও বর্ষাকালে পেঁয়াজ চাষ হয়। শীতকালে সব থেকে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয়।
দু’টি মরসুম মিলিয়ে জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। তাতে প্রায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে জেলায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।
বাসিন্দাদের দাবি, জেলায় পেঁয়াজ রাখার জন্য কোনও হিমঘর না থাকায় উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ ভিন্ রাজ্যে, এমনকি বিদেশের বাজারেও চলে যায়। পেঁয়াজ ওঠার সময়ে চাষিরা জলের দরে বিক্রি করতে বাধ্য হোন।
অথচ এই জেলার লোককে এখন ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন জেলার বাসিন্দারা।