Hariharpara

প্রশাসন পাশে, বাদাম বেচা বন্ধ হল জাহাঙ্গিরদের

পরিবারের লোকেদের দাবি, করোনা আবহে লকডাউনের সময় ধরেই পরিবারের রোজগার কমেছে।

Advertisement

মফিদুল ইসলাম

হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১২
Share:

জাহাঙ্গির, সাইদের পাশে বিডিও। ফাইল চিত্র।

আর বাদাম বিক্রি নয়। পড়াশোনা করবে জাহাঙ্গির, সাঈদ, বাসিদুলরা। তাদের পরিবারকে সহায়তার আশ্বাস ব্লক প্রশাসনের।

Advertisement

করোনা আবহে প্রায় ন'মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল। নতুন বছরে নতুন ক্লাসে উঠলেও শুরু হয়নি ক্লাস। আর কবে ক্লাস চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত শিক্ষক, পড়ুয়া, অভিভাবক সকলেই। নতুন ক্লাসে ভর্তি হবার পর নতুন বই পেলেও বই খুলে পর্যন্ত দেখেনি জাহাঙ্গিররা, সাঈদ, বাসিদুলরা। আসলে তারা ব্যস্ত সংসারে সহায়তা করতে দু-পয়সা আয় করতে। জানা গিয়েছে প্রায় মাস খানেক ধরে তারা ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির শিবিরে চিনে বাদাম বিক্রি বিক্রি করছিল। দিন শেষে আসলের পাশাপাশি প্রতিদিন তারা দেড়শো থেকে দুশো টাকা তুলে দিচ্ছিল বাবা-মায়ের হাতে। ফলে অভাবের সংসারে কিছুটা হলেও তাদের পরিবারে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরেছিল। মঙ্গলবার হরিহরপাড়ার হাজি একে খান কলেজে আর পাঁচটা দিনের মতই বাদামের পসরা সাজিয়ে বসেছিল তারা। বিষয়টি লক্ষ্য করেন হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক। তিনি কথা বলেন ওই পড়ুয়াদের সাথে। তাদের তিন জনের কাছে থাকা প্রায় পাঁচ কেজি বাদাম কিনে নেন বিডিও। পরে তাদেরকে সেগুলি বিক্রি নয় খাওয়ার জন্য ভাগ করে দেন। তারা যেন বাদাম বিক্রি ছেড়ে পড়াশোনায় মন দেয় তার জন্য দীর্ঘক্ষণ বিডিও তাদের সাথে কথা বলেন। কথা বলেন স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথেও।

বুধবার ছিল হরিহরপাড়ার বিহারিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবিরে। অন্যদিনের মত এদিন জাহাঙ্গিরদের বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায়নি বলে জানা গিয়েছে। জানা গিয়েছে হরিহরপাড়ার কেদারতলা গ্রামের বাসিন্দা তারা। জাহাঙ্গির নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের ক্লাস টেনের পড়ুয়া এবং সাঈদ ও বাসিদুল মিঞারবাগান জুনিয়র হাইস্কুলের ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া। জাহাঙ্গিরের বাবা পেশায় বেসরকারি মাদ্রাসার মৌলানা। সাঈদের বাবা গ্রামে গ্রামে মরসুমি ফসল কেনাবেচা করেন। আর বাসিদুলের বাবা হাটে পোশাক বিক্রি করেন। তাদের পরিবারের লোকেদের দাবি, করোনা আবহে লকডাউনের সময় ধরেই পরিবারের রোজগার কমেছে। এদিকে করোনা আবহে স্কুল বন্ধ। এদিকে দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শিবিরে প্রায় প্রতিদিনই ব্লকের কোনও না কোনো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শিবিরে প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে।

Advertisement

পরিবারের লোকেরা তাই তাদের বাদাম বিক্রির কাজে উৎসাহিত করেছিল।

তবে, বিষয়টি বিডিওর নজরে আসায় সম্বিত ফিরেছে তাদের ও পরিবারের। বাসিদুলের বাবা মর্তজা শেখ বলেন, ‘‘বিডিওর কথায় আমাদের চোখ খুলেছে। বাড়িতে আর বিশ-ত্রিশ কেজি বাদাম আছে, আমিই তা হাটে বিক্রি করে দেব। ছেলেকে আর একাজ করতে দেব না। ও এখন বাড়িতেই পড়াশোনা করবে। স্কুল খুললে ফের স্কুলে পাঠাব।" নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় তাদের পরিবারের লোকেদের সাথে কথা বলব বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জাহাঙ্গির, সাঈদ, বাসিদুলরাও বলছে, ‘‘স্কুল বন্ধ বলেই বাদাম বিক্রি করছিলাম। স্কুল খুললে ফের স্কুলে যাব। পড়াশোনা করব।" তবে পড়াশোনা করে ঠিক কী করতে চায় তারা তা এখনও বোধগম্য হয়নি তাদের। হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক বলেন, "ওদের সাথে কথা বলার পর ওরা যে বাদাম বিক্রি বন্ধ করেছে জেনে ভাল লাগছে। ওদের পড়াশোনা করতে যা সহায়তা লাগবে ব্লক প্রশাসন তা বহন করবে।" ওই দুই স্কুলের শিক্ষক ও পরিবারের লোকেদের সাথে ফের যোগাযোগ করবেন বলেও আশ্বাস দেন বিডিও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement