ভাণ্ডারদহ বিলের সংস্কারের দাবিতে শুরু হল অধীরের পদযাত্রা। — নিজস্ব চিত্র
দিন কয়েক আগে কটাক্ষটা উড়ে এসেছিল রানিতলায় তৃণমূলের এক জমায়েত থেকে।
মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের লক্ষ্যটা যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, তা নিয়ে সংশয় ছিল না। মন্ত্রী বলেছিলেন— ‘‘স্থানীয় এক নেতা আগে খুব হেঁটেছেন। কিছুই অবশ্য করতে পারেননি। তা, তিনি নাকি ফের হাঁটবেন।’’
তিনি হাঁটলেন, এবং যাবতীয় ভর্ৎসনা সরিয়ে তাঁর হাঁটার একটা খতিয়ানও দিয়ে রাখলেন— ‘‘এর আগে নদী ভাঙন প্রতিরোধে হেঁটেছি। ইউপিএ আমলে ৩৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। বন্যা মোকাবিলার জন্য কান্দি মাস্টার প্ল্যানের দাবিতে ১৭০ কিলোমিটার হেঁটেছি, বরাদ্দ হয়েছে ৪৩৯ কোটি টাকা। এ বার ভাণ্ডারদহ বিল সংস্কারের দাবিতে পথে নেমেছি।’’
অধীরের কথায়, শাসক দলের শীর্ষ নেতারা কতটা গায়ে মাখলেন জানা নেই। তবে, হারানো জমি ফিরে পেতে ফের মুর্শিদাবাদই যে তাঁর বাজি, এ দিন তা টের পেয়েছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তাঁদের এক জন তাই স্পষ্টই বলছেন, ‘‘যতোই হোক, লোকটার নাম তো অধীর। উনি মুর্শিদাবাদটা চেনেন। হাঁটলে ওঁর সঙ্গে মানুষও হাঁটবে!’’
জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের খানও তা জানেন। তিনিও এ দিন সে ভরসাতেই বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, ভাণ্ডারদহ বিল সংস্কার নিয়ে বছর খানেক ধরে বিধানসভার ভিতরে-বাইরে কংগ্রেস যে আন্দোলন করছে তা কিন্তু অধীরের নেতৃত্বেই।’’
কংগ্রেসের মেজো-সেজো নেতারাও সে ভরসায় বুক বাঁধছেন, বলছেন— অধীর পথে নামায় তৃণমূলের বুক কেঁপেছে। রানিতলায় তাই পাল্টা সভা করতে হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, বিল সংস্কারের সমীক্ষা কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তিন-চার মাসের মধ্যে সংস্কারের কাজও শুরু হবে। তবে, মৎস্যমন্ত্রী দেওয়া সে দিনের প্রতিশ্রুতিতে কিন্তু ভরসা করছেন না সদ্য পদচ্যুত মুর্শিদাবাদ জেলাপরিষদের সভাধিপতি শিলাদিত্য হালদার। তিনি বলেন, ‘‘কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। ও সব মুখের বুলি। বিল সংস্কারের ডিপিআর-ই (ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট) তৈরি হয়নি। আর মন্ত্রী বলে দিলেন ৩-৪ মাসের মধ্যে বিল সংস্কার শুরু হবে।’’ বৃহস্পতিবার সকালে, ভান্ডারদহের লাগোয়া ভগবানগোলা থেকেই পদযাত্রার সূচনা করলেন অধীর। বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যে ক্ষমতায় নেই। কেন্দ্রেও নেই। ফলে দাবি আদায়ের জন্য আমাদের হাঁটতেই হবে। যতো দিন না দাবি মিটছে, মনে রাখবেন।’’ ভগবানগোলা থেকে শুরু হওয়া সেই পদযাত্রা চলবে আগামী ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।