প্রতীকী চিত্র
একশো শতাংশ প্রসবই ছিল বাড়িতে। চার দশক বন্ধ থাকার পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হতে দেড় বছরেই বদলে গেল চিত্রটা। ৯৭.১ শতাংশ প্রসূতিকেই বাড়ি থেকে হাসপাতালে এনে প্রসব করিয়ে রেকর্ড গড়ল বহুতালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সুতি ১ ব্লকের বহুতালি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এই সাফল্যকে জেলায় একটি নজির বলেই মনে করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলছেন, “বহু দিন বন্ধ থাকার ফলে বাড়িতে প্রসব বড় সমস্যা হয়ে উঠেছিল ঝাড়খণ্ড ও বীরভূম লাগোয়া প্রত্যন্ত এলাকা বহুতালিতে। বাড়ির কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র পেয়ে এখন এলাকার মানুষ বুঝেছেন প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের প্রয়োজনীয়তা। পঞ্চায়েতের প্রচারও যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এই সাফল্য তারই ফসল। জেলায় এরকম আরও কয়েকটি ডেলিভারি পয়েন্ট চালু করতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সমস্যা চিকিৎসক ও নার্সের। সবগুলো চালু করা গেলে শুন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বাড়িতে প্রসবের সংখ্যাকে।”
২০১৮ সালের অক্টোবরে বহুতালিতে গিয়েছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক। নিজের চোখেই দেখেন বন্ধ বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দখল নিয়ে গড়ে উঠেছে গরুর বাথান। পাশেই দখল নিয়েছে অটো, টোটো আর রুটের বাসস্ট্যান্ড। একটি মাসের প্রসব রিপোর্ট দেখে চমকে ওঠেন জেলা শাসক। এক মাসে ৫৫ জন প্রসূতির সকলেরই প্রসব হয়েছে বাড়িতে। এদের মধ্যেই ছিল তৎকালীন এক মহিলা প্রধানের নামও। বাড়িতে প্রসব করানোর ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ৫ জন সদ্যোজাতের প্রাণ গিয়েছে সেখানে। তা দেখেই হইচই শুরু হয় জেলা স্বাস্থ্য দফতরে। তার প্রায় দু’বছর পর ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নতুন ভবন গড়ে চালু হয় বহুতালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
আর গত এক বছরের পরিসংখ্যান চমকে দিয়েছে বহুতালি। এলাকার ১১৪২টি প্রসবের মধ্যে ১১০৮টি প্রসবই হয়েছে বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অর্থাৎ প্রায় ৯৭.১ শতাংশ। মাত্র ৩৪ জনের প্রসব হয়েছে বাড়িতে। শুধু তাই নয়, পরিচ্ছন্নতার নিরিখেও এ বছর নজর কেড়ে বহুতালি স্থান করে নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের সুশ্রী প্রকল্পে। এই জোড়া সাফল্যে খুশি সুতি ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত মালাকার। বলছেন, “বহুতালি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস চেষ্টা তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে আশাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পঞ্চায়েতের সহযোগিতা। যা এতদিন সম্ভব হয়নি আহিরণ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র দূরে থাকার কারণে। বহুতালির সাফল্যে তাই সকলেই খুব খুশি। এটা একটা মডেল হতে পারে জেলার অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে।” গত বছর বাড়িতে প্রসব নিয়ে সোরগোল শুরু হওয়ায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় যাতে বহুতালি এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হার বাড়ানো যায়। সংস্থার পক্ষ থেকে তিন জন কর্মীকে এলাকায় নিয়োগ করা হয়। দুটি নিশ্চয় যানও দেওয়া হয় সেখানে। এলাকায় ঘুরে ঘুরে তারা মনিটারিং করছেন প্রসূতিদের।