কৌশিকের দোকানের বদ্রি। নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার শান্তিপুর শহরের লক্ষ্মীতলা গুলবাজ মোড়ের বাসিন্দা কৌশিক প্রামাণিক ছোট থেকেই পাখি ভালবাসেন। স্কুলের নিচু ক্লাসে পড়ার সময় নিজের খাবারের কিছুটা অংশ ছাদে গিয়ে দিয়ে আসতেন পাখিদের। আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতেন কোনও দিন যদি পাখিরা তার কথা বুঝতে পারে তা হলে তার ঘরেই বাসা বাঁধবে। একটু বড় হয়ে মাথাচাড়া দেয় পাখি পোষার শখ। তবে তিনি তখনও জানতেন না এক দিন সেই পাখিরাই তাঁর গোটা পরিবারের মুখে অন্ন জোগাবে।
বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মারা যাবার পর ভাই এবং মায়ের সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। স্নাতক হওয়ার পরে স্নাতকোত্তর অবশেষে ডিএলএড (প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ) ডিগ্রি পেয়েও মেলেনি চাকরি। তবে বর্তমান কর্মসংস্থানের পরিস্থিতির কথা সম্ভবত আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। সেই মতো নেশাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। তখন থেকে টিউশনির পাশাপাশি বদ্রি, ফ্রিঞ্চ, জাভা স্প্যারো-সহ কম দামের নানা বিদেশি পাখি পুষে তার প্রজনন করিয়ে বাচ্চা বিক্রি শুরু করেন।
সেই ছোট্ট খাঁচার সামান্য পুঁজির ব্যবসা আজ নদিয়া জেলার অন্যতম বিদেশি পাখির কারবারের জায়গা হয়ে উঠেছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাভিয়ারি, কম্পিউটার-ল্যাপটপ বেশ কয়েক জন কর্মচারী-সহ ঝাঁ চকচকে দোকান আজ জেলা জুড়ে পরিচিত। লাভ বার্ড, ককাটেল, ফ্রিঞ্চ, জেব্রাফিঞ্চ, ইয়োলো সাইডেড কুনুর, পাইনাপেল কুনুর, হেলিপ্যাড বদ্রি, কোবাল্ট সিরিজ কুনুর, সান কনুরের মতো নানান ধরনের বিদেশি পাখি বিক্রি হয় সেখানে।
সম্প্রতি যোগ হয়েছে অ্যাকোয়ারিয়ামের বেশ কিছু মূল্যবান মাছ— টেক্ট্ররা উইডো, গোল্ড ফিশ, ইমপোর্টেড মলি, সুহাঙ্গী, রেড ক্যাপ, স্প্যার্ট, ডিসকাস, ক্রোকোডাইল আরও কত কী! তাদের বাসস্থান, ওষুধ, খাবার পরিচর্চার যাবতীয় দ্রব্যও রয়েছে কৌশিকের কাছে। আর পাখি এবং মাছের পরিষেবা দিয়েই অন্নসংস্থান হচ্ছে তাঁর পরিবারের।
মাকে লুকিয়ে ছাদে উঠে যে পাখিদের জন্য ছোটবেলায় নিজের খাবার ছড়িয়ে দিতেন, আজ সেই পাখিরাই এ ভাবে তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করবে, ভাবতেও পারেননি কৌশিক!