শ্রীলঙ্কার মতো রাজনৈতিক অস্থিরতার কোনও ইঙ্গিত নেই। তবে শনিবার সকালে বাংলাদেশ সরকার পেট্রোপণ্যের দাম এক ধাক্কায় ৩০-৪০ টাকা বাড়ানোয় সে দেশে আর্থিক সঙ্কটের ইঙ্গিত স্পষ্ট বলেই মনে করছেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
ঘটনাচক্রে, এপ্রিলের গোড়ায় ভারতের আর এক প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সঙ্কটের সূচনার প্রাথমিক বার্তাও এসেছিল জ্বালানির তেলের নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমেই।
চিনা তহবিলপুষ্ট প্রকল্প আর ঋণগ্রহণে ব্যস্ত প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সরকার তা নিয়ে প্রথমে তেমন গুরুত্ব দিতে চায়নি।
কিন্তু অচিরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি আর গণপরিবহণের ভাড়ার হার বাড়তে থাকায় তৈরি হয় জনবিক্ষোভ।
এর পর মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘সিলোন পেট্রলিয়াম কর্পোরেশন’ এক ধাক্কায় পেট্রলের দাম এক ধাক্কায় ৮২ টাকা এবং ডিজেলের দাম ১১১ টাকা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করে।
শ্রীলঙ্কার শক্তি বিষয়ক মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসাকারা জানিয়েছিলেন, বিপুল লোকসান সামাল দিতেই বাধ্য হয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৪৪ টাকা এবং ডিজেলের ৩৪ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা করে একই যুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক দফতরও।
জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) গত ছয় মাসে পেট্রোপণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকারও বেশি লোকসান করেছে। তা সামলাতেই মূল্যবৃদ্ধি।
শেখ হাসিনা সরকারের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘‘নিরুপায় হয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল আমরা।’’
পেট্রোল-ডিজেলের পাশাপাশি সে দেশের পরিবহণ ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত অকটেনের (গ্যাসোলিন জ্বালানি) দামও লিটার প্রতি ৪৬ টাকা বেড়েছে।
ঘটনাচক্রে, মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার মতোই জ্বালানি তেলে ‘রেশনিং’ ব্যবস্থাও চালু হয়েছে বাংলাদেশে। মোটরবাইক এবং গাড়ি-পিছু সর্বোচ্চ কত লিটার জ্বালানি কেনা যাবে, তা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার আর্থিক সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে বিপুল অঙ্কের বিদেশি ঋণকে চিহ্নিত করেছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
ঘটনাচক্রে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ঢাকার বিদেশি ঋণ ছিল ৪,৫৮১ কোটি ডলার (প্রায় ৩ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৬৫ কোটি ভারতীয় টাকা)।
এই ঋণ এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,৩২৩ কোটি ডলারে (প্রায় ৭ লক্ষ ৪২ হাজার ৫৫২ কোটি ভারতীয় টাকা)!
বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ শোধ করতে গেলে বাজারে চাপ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই এখনই রাজকোষ রক্ষায় সতর্ক না হলে তেলের বাজারের আগুন দেশের অর্থনীতিতে গ্রাস করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের বণিকমহলের একাংশ।
তবে রাজাপক্ষের মতো কখনওই রাজকোষ শূন্য করে জনমোহিনী রাজনীতি করেননি হাসিনা। তাই তাঁর পক্ষে অনেক দৃঢ় ভাবে আর্থিক পরিস্থিতির হাল সামলানো সম্ভব বলে অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন।
তাঁদের মতে, এমনটাও হতে পারে যে পরিস্থিতি যাতে শ্রীলঙ্কার মতো না হয়, তার জন্য আগেভাগেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। সে ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সঙ্কটের মোকাবিলার মতো অর্থ থাকবে সরকারের কাছে।