চলো শেখাই। জোতকমল হাইস্কুলে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
‘স্বাক্ষরের জন্য সাক্ষরতা’র পাঠ শুরু হল জঙ্গিপুরের জোতকমল হাইস্কুলে। ইতিমধ্যেই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সাড়ে তিনশো ছাত্রছাত্রী। কিন্তু তাদের মধ্যে ১১২ জনের অভিভাবকই নিরক্ষর। ডাকঘর ও ব্যাঙ্কের পাশ বইতেও টিপছাপ দিয়ে চলছে তাঁদের। কিন্তু ছাত্র ভর্তিতে টিপছাপ মানতে নারাজ স্কুল। সেই সব নিরক্ষরদের সাক্ষর করতে স্বাক্ষরতার পাঠ শুরু হল সোমবার।
সাক্ষর হয়ে স্কুলের ভর্তি-খাতায় সই করেই তাদের রেহাই মিলবে, এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কোলে ছেলে নিয়ে কাজ ফেলে স্কুলের ডাকে তাই সাড়া দিলেন মায়েরাও। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হল খাতা পেন্সিল। লক্ষ্য একটাই, টিপ ছাপ নয়। ছাত্র ভর্তির খাতায় নিজের হাতে নাম, পরিচয়, ঠিকানা লিখে নিরক্ষরতাকে দূর করতে হবে।
ওসমানপুরের সানোয়ারি বিবি এসেছিলেন পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে মাসুম শেখের হাত ধরে এ দিনের পাঠশালায়। অভিমানের সুরে মাসুমের বায়না, “সবার মা,বাবা নাম লেখা শিখতে পারলে তুমিই বা পারবে না কেন?” ছেলের অভিমান ভাঙাতে তাই চলে এসেছেন সাক্ষর হতে। দুই মেয়ে তাজমিরা খাতুন ও সাহানাজ পরভিন এই স্কুলেই পড়ে নবম শ্রেণিতে। এ বারই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ছোট মেয়ে পায়েল। তবু জাগুনপাড়া গ্রামের মা রিনা বিবির টিপ ছাপের বদনাম ঘোচেনি। রিনা বলছেন, “স্কুলে মেয়েদের মান বাঁচাতেই এ বার সই করাটা না শিখলেই আর চলছে না। তাই এলাম। দেখি কতটুকু পারি!” জাগুনপাড়ার পাতলি বিবির কোলে ১১ মাসের শিশু। সদ্য পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া ছেলে রোহিত শেখ মায়ের হাতে রুল ধরিয়ে শেখাচ্ছে নাম লেখার কারিকুরি “আরে ওটা তো ‘গ’ হল, নীচের অংশ দাগ কেটে মিলিয়ে দিলে হবে ‘প’...’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলছেন, “পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তির সময়েই দেখা যায় ১১২ জন অভিভাবকের স্বাক্ষর জ্ঞান নেই। ঠিক করি, ভর্তির খাতায় কোনোমতেই তাদের টিপছাপ নয়। তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করে নিলেও অভিভাবকদের সই করতে শিখিয়ে নিতে চাই।’’