পিকনিক-স্পট: ধানতলায়। নিজস্ব চিত্র
লোহা দিয়ে লোহা কাটার গল্প ঠিক নয়, বরং মাফিয়াদের মাটি কাটা রুখতে আস্ত একটা বাগান গড়ে তুলে পাল্টা একটা চ্যালেঞ্জ জানানোর সাহস দেখানো।
চূর্ণির কোলে সেই বাগানে এখন দুপুর-বিকেল তরুণ-কিশোরী-বালকের হুটোপুটি, বৃদ্ধদের গল্পস্থান।
যার পাশে দাঁড়িয়ে জাফরনগরের বাসিন্দারা বলেন, ‘‘দেখলেন, কী ছিল আর কী হল!’’
গ্রামের মাঝ বরাবর রাস্তাটা দিয়ে বছর কয়েক আগেও সারাক্ষাণ ছুটত মাটি বোঝাই লরি-ট্রাক্টর।
সেই সব চার চাকার ঘড় ঘড় আওয়াজ পেলেই ভয়ে রাস্তা ছেড়ে দাঁড়াত জাফরনগর। এখন সেই সব রাস্তা জুড়ে বিকেল-রাতেও গ্রামীণ মানুষের অলস সান্ধ্য ভ্রমণ।
মাটি মাফিয়াদের সেই দাপট থেকে নিজেদের বাঁচাতে ধানতলার রঘুনাথপুর-হিজুলি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত চূর্ণীর কোলে ওই মাটি কাটা ক্ষতবিক্ষত এলাকায় গড়েছে ‘চূর্ণী মমতাময়ী পিকনিক গার্ডেন’। একটা পিকনিক করার জায়গাও গড়া হয়েছে। রয়েছে ছোটদের খেলে বেড়ানোর সাজানো সরঞ্জামে ভিড়ও।
পিকনিক পার্টির কাছ থেকে জন প্রতি ১০ টাকা চাঁদা তুলে গ্রামের মানুষই এখন সাজিয়ে রেখেছে পার্ক। গাছের পরিচর্যা থেকে বাগান-সাফ সবই করছেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা কার্তিক মণ্ডল বলেন,“বছর তিনেক ধরে চূর্নী নদীর ধার থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন জায়গায় ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছিল মাটি মাফিয়ারা। গ্রামের রাস্তায় চলাচলই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিছু বলতে গেলেই ‘জানে মেরে পেলার হুমকি’। সবাই মিলে এগিয়ে না এলে আস্ত জাফরনগরটাই হারিয়ে যেত!’’
পঞ্চায়েত প্রধান কল্যাণী মণ্ডলও বলছেন, ‘‘মাটি চুরিটা বন্ধ করা খুব জরুরি ছিল। কপাল ঠুকে নেমে পড়েছিলাম। যতোই হুমকি থাক একটা আস্ত গ্রামকে তো হারিযে যেতে দেওয়া যায় না!’’
চূর্ণীর ধারে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে গর্ত হয়ে গিয়েছিল। একশো দিনের কাজে মাটি কেটে সে গর্ত ভরাট করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে গাছ। উঠেছে পার্কের পাঁচিল। এলাকা সেজেগুজে উঠছে দেকে এগিয়ে এসেছিলেন সাংসদ তাপস মণ্ডল আর বিধায়ক সমীর পোদ্দার।
স্থানীয় বাসিন্দা তপন মণ্ডল বলছেন, “মাফিয়াদের সেই দাপট যদি দেখতেন, সে এক দিন গিয়েছে।’’
আর এখন, একেবারে অন্য এক দিন এসেছে। সেই দিন আঁকড়েই বাঁচতে চাইছে জাফরনগর।