এ এক অন্য দুর্গাদের গল্প।দুর্গা পুজোর আগে সেই দুর্গাদের নিয়েই জেলায় তৈরি হল “চেতনা”। দেবী দুর্গা বিনাশ করেছিলেন অসুররূপী অশুভ শক্তিকে। আর অন্য দুর্গাদের লক্ষ্য জেলা থেকে “বাল্য বিবাহ”র অশুভ শক্তির বিনাশ। তাই তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে স্কুলে স্কুলে গিয়ে শোনাচ্ছেন তাঁদের জীবন যুদ্ধের কথা।
বাল্য বিবাহের অসুর নিধনে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের চেতনা বাড়াতে ইতিমধ্যেই অন্তত ৬০টি স্কুলে পৌঁছতে পেরেছেন তাঁরা এক সপ্তাহে। এই যুদ্ধে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও প্রশাসনের কর্তারাও।
নিজেদের জীবন যন্ত্রণার অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েই তারা বলছেন, “আমাদের দেখো। কম বয়সে বিয়ে করার ভুল যেন কেউ কোরো না তোমরা। বাবা মায়েরা বললেও না।”বাল্যবিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধির পরিণাম অল্প বয়সে মা হয়ে ওঠা, যৌন হেনস্থা এবং স্বামীর ঘর থেকে বহিষ্কার। রাজ্যে এই হার মুর্শিদাবাদে সবচেয়ে বেশি, বলছে সরকারি পরিসংখ্যানই।
সুতি ১ব্লকের সাহিমা বিবি, যাঁর বয়স এখন ২১, পরিবারের চাপে বিয়ে হয়ে যায় ১৬ বছর বয়সে। তার প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয়, দ্বিতীয় সন্তানটি বছর দেড়েকের। এখন তিনি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।তিনি বলছেন, “কম বয়সে বিয়ে হওয়ার বিপদটা তখন বুঝিনি। এখন মোটেও ভাল নেই আমি। শারীরিক সমস্যার শেষ নেই। তাই তোমরা সে ভুল কোরো না কখনও।”
বহরমপুর ব্লকের হাতিনগরের মেয়ে ওয়াসিমা খাতুন গ্রামেরই স্কুলে বৃহস্পতিবার ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরে তার দুর্দশার কথা। ওয়াসিমা বলে, “আমার পরিবারের লোকের স্বপ্ন ছিল আমি অনেক দূর পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াব। কলেজে পড়ব। কিন্তু আমি নিজের ভুলে ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করি। ভেবেছিলাম পড়াশোনা চালিয়ে যাব। কিন্তু সংসারের চাপে আমার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। দু’বছরের মাথায় এক সন্তান জন্ম নেয়। তখন দেখা দেয় চরম রক্তাল্পতা। আমি এখনও অসুস্থ। আমি যে আফসোস করছি, তা যেন তোমাদের কাউকে আর না করতে হয়।”
বেলডাঙ্গা ১ ব্লকের আলেয়া বেগম, যার কম বয়সে বিয়ে হয়ে এখন ৩ সন্তানের মা। শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ। কেমন আছেন তিনি, কেমন আছে তাঁর শিশুরা বলতে বলতে এক সময় কান্নায় ভিজে আসে তাঁর চোখ।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহ অধিকর্তা জয়ন্ত চৌধুরী জানান, মুর্শিদাবাদ জেলায় বাল্য বিবাহের হার ৫৫.৪ শতাংশ। জেলায় কম বয়সে মা হচ্ছেন ২০.৬ শতাংশ কিশোরী। জঙ্গিপুরে এই হার ২৮ শতাংশেরও বেশি। বহু দিন ধরেই চেষ্টা হচ্ছে বাল্য বিবাহ বন্ধের। কিন্তু সেভাবে সাফল্য আসছে না। তাই “চেতনা” গড়েই চেতনা আনার চেষ্টা শুরু করা হয়েছে।