চুল দান শিক্ষিকার। নিজস্ব চিত্র।
দিন কয়েক আগেও ডোমকল বালিকা বিদ্যাপীঠের দিদিমণি টিনা মণ্ডলের চুল ছিল লম্বা। হঠাৎ করেই সোমবার থেকে তার ববছাঁট চুল দেখে ফিসফিসানি চলছে ক্লাসের পড়ুয়াদের মধ্যে। আর বুধবার পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী এসে সরাসরি বলেই ফেলল ‘‘দিদি কেন ছোট করে চুল কাটলেন।’’ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের উদ্দেশ্যে চুল দানের পরে স্কুলে এসে শিক্ষিকা ডোমকলের বাসিন্দা টিনাকে এ ভাবেই নানা প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। গোটা স্কুল জুড়ে ছাত্রীদের চোখ এখন দিদিমণির চুলের দিকে। তবে চুল দান করতে পেরে নিজেকে অনেকটাই হালকা মনে করছেন টিনা।
কিন্তু ডোমকলের মতো একটা পিছিয়ে পড়া জায়গা থেকে এমন ভাবনা মাথায় এল কী করে?
টিনা বলছেন, সমাজমাধ্যমে প্রথম নজর এসেছিল তারই এক সহকর্মীর এমন চুল দান। পরে তাঁর কাছ থেকেই গোটা বিষয়টি জেনে নিয়ে মুম্বইয়ের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তার ১২ ইঞ্চিরও বেশি চুল। টিনার দাবি, ‘‘ছোটবেলা থেকেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা আমার কাছে নেশার মতো ছিল। অনেককেই দেখতাম রক্তদানের মধ্যে দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু আমি শারীরিক কারণে রক্তদান করতে পারিনি কখনও। ফলে মনের ভিতরে একটা আক্ষেপ থেকে গিয়েছিল। চুল দান করার পর থেকে কিছুটা হলেও সেই আক্ষেপটাকে ঝেড়ে ফেলতে পেরেছি। মানুষের জন্য কিছু একটা করতে পারলাম মনে হচ্ছে।’’ তবে আরও একটা আক্ষেপ তার থেকে গিয়েছে। ‘‘বিষয়টা যদি আরও আগে জানতে পারতাম তাহলে কম বয়স থেকে চুল দান করলে বেশ কয়েক বার করতে পারতাম’’, বলছিলেন ওই শিক্ষিকা।
এই জেলার অনেকেই চুল দান করেছেন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ডোমকলে সম্ভবত এই প্রথম কোনও মহিলা এগিয়ে এলেন ক্যানসার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে। চুল নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে মহিলাদের, চুল দানের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিবার থেকে আত্মীয়-স্বজন। কিন্তু টিনার মা সুলেখা রানী মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়ের চুল ক্যানসার আক্রান্ত মহিলার কাজে লাগলে সব থেকে খুশি হব আমি।’’