জটিল অস্ত্রোপচার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। প্রতীকী চিত্র।
এত দিন পর্যন্ত গোটা দুনিয়ায় উদাহরণ ছিল মাত্র ১৬টি। ১৭তম উদাহরণ তৈরি হল এ রাজ্যের নদিয়ার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
পোশাকি নাম ‘বাইকর্নুয়েট ইউটেরাস ইউনিকলি সার্ভিক্স’ অর্থাৎ জরায়ুর মুখ একটি, কিন্তু তা বিভক্ত দু’টি প্রকোষ্ঠে। আর সেই দুই প্রকোষ্ঠে দু’টি ভ্রূণ নিয়ে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল নদিয়ার এক মহিলাকে। সোমবার ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করে ওই মহিলার দুই সন্তানকেই পৃথিবীর আলো দেখালেন ওই হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং শল্যচিকিৎসক পবিত্র ব্যাপারী। ওই মহিলা এক কন্যাসন্তান এবং এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। প্রসূতি এবং তাঁর দুই সন্তান তিন জনেই সুস্থ।
এমন ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় খুশি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। ওই অস্ত্রোপচার যাঁর হাতে হয়েছে সেই পবিত্র বলেন, ‘‘এর আগে ওই মহিলার দু’টি ভ্রূণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমরা পরীক্ষা করি ওঁকে। জানতে পারি, জরায়ুতে দু’টি প্রকোষ্ঠ আছে। এমন অবস্থায় উনি সন্তানসম্ভবা হন। তখন দেখি দুই প্রকোষ্ঠে দু’টি ভ্রূণ রয়েছে। আমরা ওঁর অস্ত্রোপচার করি। এটা খুব একটা দেখা যায় না। এর আগে মাত্র ১৬টি ঘটনা ঘটেছে গোটা পৃথিবীতে।’’
এমন ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু শান্তিপুরের ওই হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। তবে প্রসূতির জন্য আগে থেকে রক্তদাতা জোগাড় করে রেখেছিলেন চিকিসৎকেরা। চিকিৎসকদের এই ভূমিকায় খুশি ওই মহিলার স্বামী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত দরিদ্র। এ সব ক্ষেত্রে অনেক টাকা প্রয়োজন। তা আমাদের নেই। আমাদের পাঁচ বছর হল বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এর আগে দু’টি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখেনি। সন্তানের বাবা হব এ কথা ভাবতেও পারিনি। আমার স্ত্রীও মানসিক অবসাদে ভুগছিল। ডাক্তারবাবু আমাদের রক্ষা করলেন।’’
পবিত্রের কর্মকাণ্ড নিয়ে উচ্ছ্বসিত শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার তারক বর্মণ। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বছর দুয়েক হল এখানে এসেছি। এই ধরনের অস্ত্রোপচার এর মধ্যে দেখিনি। ওই অস্ত্রোপচার সিজারিয়ান পদ্ধতিতে হয়েছে। এটা বেশ জটিল ব্যাপার। এখানে ব্লাড ব্যাঙ্ক নেই। তার মধ্যেও এমন একটা অস্ত্রোপচার হয়েছে। পবিত্র ব্যাপারী অসাধ্যসাধন করেছেন।’’