—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্য পুলিশের এক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে রানাঘাট আদালতে। ঘটনাচক্রে, তিনি তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার স্ত্রীর দেহরক্ষী।
সোমবার শুভঙ্কর সরকার নামে ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে রানাঘাট আদালতে মামলা রুজু করেন তাঁর স্ত্রী শ্রাবণী সরকার। তাঁর বক্তব্য শোনার পর বিচারক প্রবীর মহাপাত্র রানাঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের নভেম্বরে রানাঘাট থানার পায়রাডাঙা এলাকার প্রীতিনগরের বাসিন্দা শুভঙ্করের সঙ্গে ওই এলাকারই বাসিন্দা শ্রাবণীর বিয়ে হয়। তিন মাসের মধ্যে শ্রাবণী অন্তঃসত্ত্বা হন। তাঁর অভিযোগ, তখন থেকেই শুভঙ্কর ও তার পরিবারের সদস্যেরা তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করেন। পরে মেয়ে জন্মালে অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। ঘটনাচক্রে, ২০১৭ সালে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন শুভঙ্কর। বর্তমানে তাঁরই স্ত্রীর দেহরক্ষীর দায়িত্বে রয়েছেন বলে আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রাবণীর অভিযোগ, "শুভঙ্কর মাঝে-মধ্যেই মত্ত অবস্থায় আমায় মারধর করে। এক মহিলার সঙ্গে ওর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। আমি সেই কথা জানতে পেয়ে প্রতিবাদ করায় অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এখন ও মাঝে-মধ্যেই সার্ভিস রিভলভার বাড়িতে এনে আমার কপালে ঠেকিয়ে গুলি করে মারার হুমকি দেয়।"
অভিযোগে জানানো হয়েছে, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ৩ এপ্রিল তিনি কীটনাশক বা বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমে তাঁকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে সেখান থেকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। শ্রাবণীর অভিযোগ, "গত বছর নভেম্বরেও শুভঙ্কর লোহার রড দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করেছে। সেই মারের ক্ষতচিহ্ন আমার হাতে-পায়ে, পিঠে এখনও রয়েছে।" তাঁর দাবি, "সেই সময়েই আমি রানাঘাট থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে আসি।"
অভিযুক্ত শুভঙ্করের দাবি, "বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী আমাকে নিয়ে আলাদা থাকবে বলে বিভিন্ন রকম ভাবে চাপ সৃষ্টি করছিল। তা ছাড়া, অন্য এক পুরুষের সঙ্গে ওর সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হতেই ও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করেছে।" শ্রাবণীর আইনজীবী রাজা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ওঁর স্বামী ও তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুনের চেষ্টা, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া ও সংগঠিত অপরাধের ধারায় আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। বিচারক সমস্ত ঘটনা শুনে রানাঘাট থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আইনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।"
রানাঘাট থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করা হবে।