আসানসোল দক্ষিণ থানার ১ নম্বর মহিষীলা কলোনির বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় এর আগেও মেয়ে-বৌ মিলিয়ে ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। প্রতীকী ছবি।
কোলের বাচ্চা-সহ ৫ দিন ধরে নিখোঁজ ২১ বছরের এক তরুণী। মঙ্গলবার ওই বাচ্চাটিকে তার বাড়ির পাশে ছেড়ে দিতে দেখা গিয়েছে পাড়ারই এক কমবয়সি মেয়েকে। এই ‘অপহরণ’কাণ্ডে জড়িত ওই মেয়েটি-সহ পাড়ার লোকজন এবং এক আত্মীয়। বুধবার এমনই অভিযোগ করলেন ‘নিখোঁজ’ তরুণীর দাদা মনু পাণ্ডে। মনুর দাবি, তাঁর বোনপোর পকেট থেকে মোবাইল নম্বর এবং বোন গুড্ডি পাণ্ডের বাড়ির ঠিকানা মিলেছে। এ নিয়ে পুলিশে নালিশ করতে গেলে ধমক খেয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। বাচ্চাটির সঙ্গে যে কমবয়সি মেয়েকে দেখা গিয়েছে, তিনি নারী পাচারে যুক্ত বলেও অভিযোগ। গোটা ঘটনায় তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
আসানসোল দক্ষিণ থানার ১ নম্বর মহিষীলা কলোনির বাসিন্দা গুড্ডিকে অপহরণের অভিযোগে জড়িত সন্দেহে বুধবার এক তরুণী এবং তাঁর বান্ধবীর বাড়িতে ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। মনুর অভিযোগ, ‘‘শনিবার থেকে আমার বোন গুড্ডি নিখোঁজ। পাড়ার ৩ জনের সাহায্যে বোনকে অপহরণ করেছেন আমারই এক আত্মীয়। বোনের বাচ্চাকে পাওয়া গিয়েছে। তার পকেটে একটা চিরকুটে আমার মোবাইল নম্বর লেখা ছিল। সিসিটিভি-তে দেখা গিয়েছে, বোনের বাচ্চার হাত ধরে পাড়ায় নিয়ে আসছে এলাকার এক তরুণী। তাঁর কড়া শাস্তি চাই। যাঁরা এই কাণ্ডে জড়িত, তাঁদেরও সাজা হোক।’’ এই কাণ্ডে অভিযুক্ত ৪ জনের নাম থানায় বলেছেন বলে জানিয়েছেন মনু।
স্থানীয়দের দাবি, এলাকায় এর আগেও মেয়ে-বৌ মিলিয়ে ৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁদের খোঁজখবর মেলেনি। এলাকা থেকে মেয়ে-বৌরা কেন নিখোঁজ হচ্ছেন, তা তদন্ত করে দেখার দাবি করেছেন স্থানীয়েরা। মনুর দাবি, মাস তিনেক আগে তাঁর এক আত্মীয়ের সঙ্গে পারিবারিক ঝামেলা হয়েছিল। সেই আক্রোশেই গুড্ডিকে অপহরণ করেছেন ওই আত্মীয়।
শনিবার থেকে গুড্ডি পাণ্ডে নিখোঁজ বলে দাবি তাঁর দাদা মনু পাণ্ডের। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার পাড়ার যুবকেরা সিসিটিভি ফুটেজে খতিয়ে দেখে জানতে পারেন, গুড্ডির বাচ্চাকে তার বাড়ির কাছে রেখে দিয়ে চলে যাচ্ছেন এলাকার এক তরুণী। এর পর ওই তরুণী এবং বান্ধবীর ঘর বন্ধ বলে অভিযোগ। তৃণমূলের বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে ওই তরুণীরা থাকেন বলেও দাবি স্থানীয়দের। ট্রেনের টিকিটবিক্রেতা তথা এলাকার এক বাসিন্দা বিনোদ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘‘৫-৬ দিন আগে আমার কাছে চার জনের জন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে এসেছিল পাড়ার এক তরুণী। চার জনের আধার কার্ড না দেওয়ায় আমি টিকিট দিইনি। এই ঘটনার সঙ্গে এঁরা যুক্ত হলেও হতে পারে।’’
৪২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের যুব সংগঠনের এক নেতা কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘এলাকার লোকজনের অভিযোগ, পাড়ার একটি তরুণী নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে, নিখোঁজ তরুণীর বাচ্চাকে হাত ধরে পাড়ায় নিয়ে আসছেন ওই তরুণী। ওই বাচ্চাটিকে কোথায় পেলেন ওই তরুণী? পুলিশকে অবশ্যই অভিযোগ জানাব।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু রায় বলেন, ‘‘আমাদের দল এ ধরনের দুষ্কৃতীমূলক কাজকে আশ্রয় দেয় না। এই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, সেই দোষীদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।’’
এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে আসানসোল দক্ষিণ থানার পুলিশ। যদিও গুড্ডিকে উদ্ধার করতে পারেনি তারা। তবে পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘যে দুই তরুণীর বিরুদ্ধে অপহরণে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালাননি। ঘরেই রয়েছেন। গুড্ডি পাণ্ডে নিজের ইচ্ছেয় বাড়ি ছেড়েছেন নাকি তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ ডিসি (মধ্য) এসএস কুলদীপের আশ্বাস, ‘‘পুরো বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’