জালিয়াতিতে গ্রেফতার দুই মহিলা। নিজস্ব চিত্র
নকল সোনা বন্ধক দিয়ে সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার অভিযোগ উঠল। এই ঘটনায় ব্যাঙ্কের তরফেই নিযুক্ত এক সোনা পরীক্ষক-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে তাহেরপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে দুই মহিলা গ্রাহককে রবিবার সকালে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন তাদের রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। বাকি দুই অভিযুক্তের হদিস মেলেনি।
নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীনে বাদকুল্লার সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা থেকে বছর তিনেক আগে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয় দুই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট মারফত। অভিযোগ, সম্প্রতি এই সোনা যে নকল, তা জানতে পারেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। এর পরেই তাহেরপুর থানার দ্বারস্থ হন কর্তৃপক্ষ। তাহেরপুর থানার পাটুলি পাম্প পাড়ার বাসিন্দা সুচিত্রা মণ্ডল এবং মুগরাইলের বাসিন্দা ঝর্ণা রায় আগে থেকেই ওই ব্যাঙ্কের গ্রাহক রয়েছে। ব্যাঙ্কে তাদের নিয়মিত আর্থিক লেনদেন হয়। তাদেরই পরিচিত এক জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী শৈলেন কর্মকার। সুচিত্রা এবং ঝর্ণার অ্যাকাউন্ট থেকে সোনা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ।
ব্যাঙ্কের নিয়ম অনুযায়ী, বন্ধক রাখার সময় প্রথমেই সেই সোনা যাচাই করে নেওয়া হয়। সেই সময়ে কিছু অবশ্য নজরে আসেনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। পরে তাঁদের সন্দেহ হলে সম্প্রতি দ্বিতীয় আরেক জনকে দিয়ে সোনা যাচাই করানো হয়। তখনই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন, বন্ধক রাখা সোনা আসলে নকল। এর পরেই তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হন।
ওই দুই মহিলা গ্রাহকের দাবি, স্বর্ণ ব্যবসায়ী শৈলেন তাদের জানায়— তার ওই ব্যাঙ্ক থেকে কিছু ঋণ নেওয়া প্রয়োজন। সে প্রয়োজনে নিজের সোনা বন্ধক রেখে ওই দুই গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট মারফত ঋণ নেবেন। সেই মতো তাদের অ্যাকাউন্ট থেকেই এই ঋণ নেওয়া হয় সোনা বন্ধক রেখে।
আর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, শৈলেনই ব্যাঙ্কে বিভিন্ন গ্রাহক ধরে আনত। পাশাপাশি, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাঙ্কের তরফে সোনা যাচাইয়ের কাজও করে আসছে শৈলেন। সেই সুযোগ নিয়েই সে এই অপরাধ করেছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
অভিযুক্ত অ্যাকাউন্ট-গ্রাহক সুচিত্রা মণ্ডলের স্বামী রমেন মণ্ডল বলেন, ‘‘শৈলেন কর্মকার আমাদের পরিচিত ছিল। তার কথামতো তারই দেওয়া সোনার গয়না ব্যাঙ্কে রেখে প্রায় তিন বছর আগের দুই লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিল আমার স্ত্রী। ঋণ দেওয়ার সময়ে ব্যাঙ্ক যাচাই করে, ওই সোনা আসল বলেই শিলমোহর দিয়েছিল। কিন্তু এখন সোনা নাকি নকল হয়ে গিয়েছে! আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’ আরেক অভিযুক্ত অ্যাকাউন্ট-গ্রাহক ঝর্ণা রায়ের আইনজীবী স্বর্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সোনা যাচাই করে ঋণ দেওয়ার কাজ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ঋণ দেওয়ার পর ব্যাঙ্ক কখনওই বলতে পারে না, ওই সোনা নকল ছিল। আমার মক্কেলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।’’ ঘটনার তদন্তে নেমে রবিবার সকালে ঝর্ণা এবং সুচিত্রাকে গ্রেফতার করে তাহেরপুর থানা পুলিশ। রবিবার তাদের রানাঘাট আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। তবে ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী শৈলেন কর্মকারের খোঁজ মেলেনি।
এই প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শিবনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের ঋণ নেওয়ার সময়ে যে সোনা বন্ধক রাখা হয়েছিল, তা নকল বলে আমরা জানতে পেরেছি। যে ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এই সোনা যাচাই করা হয়, সে নিজেই এতে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। পুলিশকে জানিয়েছি।’’