চলছে ষষ্ঠীর সন্ধ্যারতি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পুজোর সময়ে বিশেষত বিসর্জনে নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে বলে দিন কয়েক আগেই সতর্কবার্তা জারি করেছিল নবান্ন। পুজো উদ্যোক্তা থেকে প্রশাসন—সর্বস্তরকে সতর্ক থাকতে বলেছিল প্রশাসনের শীর্ষমহল। সূত্রের খবর, সোমবার, মহাষষ্ঠীর দিনে সেই সব সতর্কবার্তাই জেলা প্রশাসনগুলিকে মনে করিয়ে দিয়েছেন নবান্নের শীর্ষকর্তারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সন্দেহভাজন গতিবিধি নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসনগুলিকে। বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিলে কড়া হাতে তা মোকাবিলা করতে হবে জেলা পুলিশকে। নবান্নে সর্বক্ষণের কন্ট্রোল রুমও চালু রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় রেখে চলেছেন। পুজোর বাকি দিনগুলিতেও এই নজরদারি চালু থাকবে বলেই সূত্রের খবর।
কোভিড আবহে দর্শনার্থীদের ভিড় প্রশাসনের উপরে বাড়তি চাপ তৈরি করছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পুজোয় কোভিড বিধি এবং কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করতে পুনরায় জেলা প্রশাসনগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে পুজো উদ্যোক্তাদের যেমন সক্রিয় থাকতে হবে, বিধি পালনে তেমনই নজর রাখতে হবে জেলা প্রশাসনগুলিকেও।
যদিও সব ধরনের সতর্কবার্তাকে অগ্রাহ্য করে পথে নেমেছেন মানুষ। ভিড়ে দূরত্ব বিধি কার্যত শিকেয় উঠেছে। অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণ, ছবিটা কার্যত একই রকম। কোচবিহারের দেবীবাড়ি থেকে শুরু করে শিলিগুড়ির হায়দার পাড়া, আশ্রমপাড়া, হিলকার্ট রোড, এনজেপি, মালদহের ইংরেজবাজার বা গৌড় রোড সর্বত্রই বিকেলের পর থেকে ভিড় জমতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি বুঝে পুলিশ নানা এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে নামে।
পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুক, হলদিয়া, কাঁথির মতো শহরাঞ্চল বাদে বিস্তীর্ণ গ্রামীণ এলাকা এখনও বানভাসির ক্ষত সারাতে পারেনি। ফলে সেখানে নিয়মরক্ষার পুজোয় ভিড়ও নেই। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় পঞ্চমীর দ্বিগুণ ভিড় হয়েছে সোমবার। মেদিনীপুর বা খড়্গপুরের বড় পুজোর ভিড়ে কোভিড বিধি মাথায় উঠেছে। খড়্গপুরের তালবাগিচা নেতাজি ব্যায়ামাগারের পুজোর কর্মকর্তা বিমান রায় বলেন, “৬০ শতাংশ মানুষই মাস্ক না পরায় আমরাও দিশাহারা। সপ্তমী-অষ্টমী-নবমীতে কী হবে জানি না!”
ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই মানুষের ঢল নেমেছে আসানসোল ও দুর্গাপুরের পুজো মণ্ডপগুলিতে। পানাগড়েও একই ছবি। সকালে বাজার-দোকানে এবং বিকেল থেকে মণ্ডপে ভিড় হয়েছে বর্ধমান, কালনা ও কাটোয়ায়। করোনা-বিধি উড়িয়ে সকাল থেকেই ভিড় জমেছে হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন মণ্ডপে। উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসতের মণ্ডপগুলিতে মাস্ক ছাড়াই বহু বাবা-মা শিশুদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মণ্ডপগুলিতে অবশ্য তেমন উপচে পড়া ভিড় ছিল না।
পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া খনি অঞ্চলে বড় বাজেটের কয়েকটি পুজোমণ্ডপে ভাল ভিড় থাকলেও জেলার অন্যত্র বা বাঁকুড়ায় ভিড় ছিল না। মুর্শিদাবাদে বহরমপুর-সহ সর্বত্র ভিড়ে রাশ টানতে নজরদারি চালিয়েছে পুলিশ। নদিয়ায় কল্যাণী, জাগুলি, বাদকুল্লার পুজোতেও ভিড় হাল্কাই ছিল।