প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে বহু প্রকল্পেই কেন্দ্র বরাদ্দ আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ। সেই সব প্রকল্পের মধ্যে আপাতত শুধু ‘জল জীবন মিশনে’ (রাজ্যের দেওয়া নাম ‘জলস্বপ্ন’) কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পেয়েছে রাজ্য সরকার। তহবিল আসার পথ মসৃণ রাখতে কেন্দ্রের দেওয়া প্রকল্প-নাম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এ বার ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখতে তৃতীয় পক্ষের নজরদারির সম্ভাবনা জোরালো হল। নবান্ন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিকে নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী মঙ্গলবার সব জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ওই প্রকল্প নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে তৃতীয় পক্ষের নজরদারির বার্তা দেওয়া হয়েছে জেলাগুলিকে।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ প্রকল্পগুলি নিয়ে যে-ভাবে নানা অভিযোগ সামনে আসছে, সেই দিক থেকে এই বার্তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। একশো দিনের কাজ, আবাস বা সড়ক যোজনা নিয়ে অভিযোগ তুলনায় বেশি। বাংলায় এই জল প্রকল্পের কাজকর্ম নিয়েও অতীতে ততটা খুশি হতে দেখা যায়নি কেন্দ্রকে। ফলে নজরদারির প্রশ্নে কোনও ফাঁক না-রাখার চেষ্টা রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফেও। অবশ্য এ দিনের বৈঠকে এই জল প্রকল্প নিয়ে রাজ্যের অগ্রগতিতে কেন্দ্র সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। সাধারণ ভাবে ছ’মাস অন্তর এই প্রকল্পের অ্যাপেক্স কমিটির বৈঠক হয়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ কোনও প্রকল্পে কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তার উপরে নজরদারি চালানোর জন্য তৃতীয় কোনও পক্ষকে নিযুক্ত করার প্রথা রয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবে সমীক্ষা চালিয়ে প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য তৈরি করে তারা। এ দিনের বৈঠকের পরে জল জীবন মিশনের ক্ষেত্রে তেমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। প্রবীণ প্রশাসকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, সাধারণত নথিবদ্ধ কোনও স্বাধীন সমীক্ষক সংস্থাকেই এমন দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও তেমনই ইঙ্গিত রয়েছে। তা বাস্তবায়িত হলে প্রকল্পের কাজ, যোগ্য পরিবারে জল সংযোগ, জলের গুণমান ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি বজায় থাকবে। ইতিমধ্যেই অবশ্য জলের গুণমানের বিষয়টিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য।
প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২০ সালে জল জীবন মিশন (জলস্বপ্ন) শুরু হয় বঙ্গে। মাঝখানে কোভিডের সময় কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হলেও পরে কাজের গতি অনেকটাই বাড়িয়েছে রাজ্য। কিন্তু প্রকল্পের সামনে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল কেন্দ্র টাকা আটকে দেওয়ায়। অভিযোগ, এই প্রকল্পেরও নাম বদলানো হয়েছে। অবশেষে নবান্ন নিজেদের দেওয়া নাম প্রত্যাহার করে কেন্দ্রীয় নাম চালু করায় কিছু দিন আগেই এই প্রকল্পে রাজ্যকে প্রায় ১০০০ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, বরাদ্দ জোগানের এই ধারা যাতে অব্যাহত থাকে, সেই জন্য নজরদারির প্রশ্নেও কোনও ঘাটতি রাখবে না নবান্ন।