ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কলকাতা হাই কোর্টের নির্ধারিত সময়সীমা যত কাছে এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে নবান্নের চিন্তা। ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকার ঠিক কী ধরনের পদক্ষেপ করবে, মঙ্গলবার পর্যন্ত তা স্পষ্ট না-হলেও কর্মচারী মহলে জোর গুঞ্জন, তৃণমূল সরকার এই ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। সময়সীমা মেনে বকেয়া ডিএ দিতে গেলে প্রকাণ্ড আর্থিক বোঝা বইতে হবে, ভাঁড়ারের বর্তমান অবস্থায় যেটা কার্যত অসম্ভব। আবার বেঁধে দেওয়া সময় না-মানলে আদালত অবমাননার মামলার আশঙ্কা আছে। এই অবস্থায় কোনও একটা মধ্যবর্তী পন্থার খোঁজে আছে নবান্ন।
অন্যতম মামলাকারী সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ় অবশ্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করার লিখিত বার্তা দিয়েছে। পঞ্চম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ মেটানোর ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য জানাতে তিন মাস সময় বেঁধে দিয়েছিল হাইকোর্ট। সেই সময়সীমা মানতে হলে সরকারকে ১৯ অগস্টের মধ্যেই অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। অর্থাৎ সময় আছে সাকুল্যে ১০ দিন।
কয়েকটি সম্ভাব্য রাস্তার কথা বলছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। এক) হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া। এ ক্ষেত্রে কনফেডারেশন আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টে ‘ক্যাভিয়েট’ দাখিল করে রেখেছে। দুই) কিস্তিতে ডিএ মেটানোর ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করা যেতে পারে। তিন) অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিয়ে কর্মরতদের প্রাপ্য অর্থ দেওয়া যেতে পারে তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে। সরকার কোন পথটি ধরবে, তা এখনও বিবেচনাধীন বলেই খবর। অন্যতর কোনও রাস্তার কথা ভাবা হচ্ছে কি না, জল্পনা আছে সেই বিষয়েও। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সব দিক নিয়েই আলোচনা চলছে। আইনি পরামর্শও চলছে সমান্তরালে।
আধিকারিকদের অনেকের বক্তব্য, রাজ্য সরকার ১৯ অগস্টের বকেয়া ডিএ মেটানোর ব্যাপারে নিজেদের সিদ্ধান্ত না-জানালে কর্মী সংগঠনগুলি আদালত অবমাননার মামলা করার পথে হাঁটতে পারে। সে-ক্ষেত্রে অধিকতর বিড়ম্বনার মুখে পড় হতে পারে সরকারকে। অন্তত এই ডিএ সংক্রান্ত মামলায় আদালতের রায় পুরোপুরি গিয়েছে কর্মচারীদের পক্ষে। সেই জন্যই কোনও একটা মধ্যবর্তী পথের সন্ধান করতে হচ্ছে রাজ্যের অর্থ প্রশাসনকে। নির্দিষ্ট সময়ে আদালতের রায় মানতে হলে এখনই সরকারকে বিপুল আর্থিক বোঝা ঘাড়ে নিতে হবে। বকেয়া ৩১% ডিএ মেটাতে সরকারকে খরচ করতে হবে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের পক্ষে তা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করেন আর্থিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে।
এই অবস্থায় রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী এবং অর্থসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি দিয়ে কনফেডারেশন আশ্বাস দিয়েছে, ডিএ রায় রূপায়ণের ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “কর্মচারীরা তো সরকারের বাইরে নয়। সরকার ইতিবাচক মনোভাব রাখলে কর্মচারীরাও খোলা মনে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন।”