ফাইল চিত্র।
কয়েক মাস পর বিধানসভা নির্বাচন। প্রশাসনের নানা স্তরে রদবদলের তৎপরতা চলছে। সেই রদবদলে 'অপরীক্ষিত'দের সুযোগ বাড়বে না কি 'পরীক্ষিত'দের উপর ভরসা করা হবে, তা নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে প্রশাসনের অন্দরে।
সাধারণত, প্রশিক্ষণ পর্বের এক বছরের শেষে ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের (বিডিও) পদ পেয়ে থাকেন ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) অফিসারেরা। বিডিও হিসাবে বেশ কিছু বছর কাজ করার পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর (ডিএম ও ডিসি) হন তাঁরা। প্রশাসনিক মহলের ব্যাখ্যায়, স্পষ্ট করে লিখিত কিছু না থাকলেও একে পদোন্নতি বলেই ধরে নেওয়া হয়। রীতি অনুযায়ী তাই ডিএম-ডিসি থেকে আবার নতুন করে বিডিও পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। কিন্তু বুধবার ৩৬ জন ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) আধিকারিকদের 'পোস্টিং' সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, দু'জনকে চালু রীতি ভেঙে ডিএম ও ডিসি থেকে বিডিও পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তাঁরা যে ব্লকে বিডিও হিসাবে কাজ শেষ করেছিলেন, সেই বাদুড়িয়া এবং ওন্দাতেই নতুন 'পোস্টিং' দেওয়া হয়েছে ওই দুই আধিকারিককে। যা তাৎপর্যপূর্ণ । বুধবার প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে বিডিও হিসাবে ১৫ জন আধিকারিক কর্মজীবন শুরু করবেন।
২০০৯-২০১০ ব্যাচের ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) আধিকারিককদের বিডিও হিসাবে কাজ করার মেয়াদ শেষ (সাধারণভাবে ছয়-আট বছর বিডিও হিসাবে কাজ করতে হয়) হয়েছে। ফলে তাঁদেরও বদলি হওয়ার কথা। একইসঙ্গে, ২০১২ সালের পদোন্নতিতে বিডিও হওয়া আধিকারিকদেরও নতুন পদে যাওয়ার সময় হয়েছে। এমনকি, চার বছরের মধ্যে তিন বছর একই ব্লকে রয়েছেন অনেকে। নির্বাচন কমিশনের নিয়মানুসারে, ভোটের আগে তাঁদের সরাতে হবে রাজ্য সরকারকে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে কিছু ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) আধিকারিকের প্রশিক্ষণ পর্ব শেষ হওয়ার কথা। ফলে তাঁরাও বিডিও হিসাবে কর্মজীবন শুরুর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাই সাধারণ 'নিয়মে' মেয়াদ শেষ হওয়া বিডিওদের পরিবর্তে নবাগতদের সুযোগ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলেছে প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, সামনে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। তার আগে নতুন ব্লকে গিয়ে সব কিছু 'চিনে, বুঝে, জেনে' প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নবাগতরা করতে পারবেন কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে প্রশাসনিক কর্তাদের। কিন্তু কর্মরত বিডিওরা থাকলে কিয়দংশে 'সুবিধা' হয়, তা মানছেন তাঁরা। পুরোনো পদের রদবদল আর নতুনদের 'পোস্টিং' - দুইয়ে মিলিয়ে আরও ৭০-৭৫ বিডিওকে বদল করতে হবে প্রশাসনকে।
আরও পড়ুন: বিভাজন নয়, ভালবেসে ‘শাসন’ করতেন ওয়াজিদ
বিধানসভা নির্বাচনে সাধারণ ভাবে সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের এইআরও (অ্যাসিট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) হন বিডিওরা। তাই নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকে তাঁদের। ভোটার তালিকার কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বিডিওরা। বিধানসভা নির্বাচনে নিবার্চনী বিধি(এমসিসি) কার্যকর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকলেও বাকি কিছুতে তেমন 'গুরুত্বপূর্ণ' দায়িত্ব থাকে না তাঁদের। তা-ও অনেকের মতে, তৃণমূল স্তরের দৈনিক কাজে বিডিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই সেখানে 'পোস্টিং' ভেবেচিন্তে করতেই হয়। আর যখন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন আগত, তখন গুরুত্ব আরও বেশি। আর এই সব কারণে নতুন নাকি পুরোনো, কোথায় 'আস্থা' রাখা উচিত, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
আরও পড়ুন: লকডাউনের দু’দিনই পাশ প্রশাসন