নবান্ন। — ফাইল চিত্র
কিছু বাহিনী ফিরে গিয়েছে। শীঘ্রই ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে আরও কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনী। এই অবস্থায় বাংলার জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনের জন্য তৈরি হচ্ছে রাজ্য পুলিশের আরও একটি বিশেষ বাহিনী— ‘স্পেশালি ট্রেন্ড আর্মড (স্ট্র) ব্যাটেলিয়ন’ বা ‘স্ট্র’।
রাজ্যে নবনিযুক্ত কনস্টেবলদের মধ্য থেকে ২০০ জনকে বেছে নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে বলে সোমবার জানান রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের এডিজি দেবাশিস রায়। খড়্গপুরের সালুয়ায় ইএফআরের কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ইউনিটে এই প্রশিক্ষণ চলছে। সেখানে একসঙ্গে ২০০ জওয়ান প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। কিন্তু করোনা-কালে দূরত্ব-বিধি মানতেই সংখ্যাটা অর্ধেক করা হয়েছে। ২০০ জনের প্রশিক্ষণ হবে দু’দফায়। ৮৪ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে তাঁদের পাঠানো হবে জঙ্গলমহলে।
বাম জমানার শেষ দিকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সিআরপি-র কোবরা বাহিনীর ধাঁচে কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফোর্স বা সিআইএফ নামে একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। গেরিলা যুদ্ধে সিআইএফ জওয়ানেরা কোবরার মতোই পারদর্শী। এই মুহূর্তে জঙ্গলমহলে থাকা ২১ কোম্পানি সিআরপি-র পাশাপাশি তারাই এখন মাওবাদী এলাকার অন্যতম মূল বাহিনী। তা ছাড়াও ‘স্ট্র্যাকো’ নামে রাজ্যের আরও একটি বাহিনী রয়েছে। আছে ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ন। এত কিছু থাকা সত্ত্বেও আরও একটি নতুন বাহিনীর প্রয়োজন হল কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে পুলিশ মহলে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে সুস্থতার হারে উন্নতি হলেও করোনায় এক দিনে মারা গেলেন ৬০ জন
পুলিশি সূত্রের খবর, মাওবাদী দমনে পটু যে-নাগা বাহিনী বঙ্গে ছিল, তারা নাগাল্যান্ডে ফিরে গিয়েছে। সামনেই বিহার-সহ কিছু রাজ্যে বিধানসভার ভোট। সেই সময় বাংলার জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী তুলে নিয়ে ওই নির্বাচনে পাঠাতে পারে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে পরিস্থিতি সামাল দিতেই নিজস্ব এই ‘স্ট্র’ বাহিনী গঠন করেছে রাজ্য সরকার।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, এই বাহিনী জঙ্গলে আত্মগোপন করে থেকে মাওবাদী বা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে টানা লড়াই করতে পারবে। সেই জন্যই তাদের বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাদের দিয়ে পুলিশের সাধারণ কাজও করানো যাবে।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর মহালয়া টুইট ঘিরে জল্পনা
২০২১ সালের মাঝামাঝি রাজ্যে বিধানসভা ভোট। এখনই জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আনাগোনার খবর আসতে শুরু করেছে গোয়েন্দাদের কাছে। খবর আসছে: মাওবাদীরা কখনও এসে এখানে-ওখানে পোস্টার মেরে যাচ্ছে, কখনও রাতের অন্ধকারে এসে বৈঠক করছে। এক পুলিশকর্তা অবশ্য বলেন, “এই সব খবরের অনেকটাই কল্পনাপ্রসূত। মাওবাদীরা সরাসরি এখনও জঙ্গলমহলে ঢুকেছে বলে মনে হয় না। এখন তারা এজেন্টদের দিয়ে এ-সব করাচ্ছে।”
ওই পুলিশকর্তা জানান, যখন মাওবাদীরা ঢুকবে, অস্তিত্ব জানান দিতে তারা হয় ল্যান্ডমাইন ফাটাবে অথবা এলাকায় দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কোনও ছোট মাপের নেতাকে হত্যা করবে। এ-পর্যন্ত রাজ্যে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। ন’বছর ধরে কার্যত শান্তই রয়েছে বঙ্গের জঙ্গলমহল।
তবে বাংলার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীদের গতিবিধি বেড়েছে এবং সেখান থেকে এ রাজ্যে এসে তারা যে-কোনও দিনই আঘাত হানতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বাম জমানার শেষ দিকে সাধারণ মানুষের প্রতি বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে মাওবাদীরা এখানে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। প্রশ্ন উঠছে, এখন তো জঙ্গলমহলের উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাচ্ছেন। তা হলে মাওবাদীরা এখন প্রভাব বিস্তার করবে কী ভাবে?
প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, উন্নয়ন হলেও মানুষের চাহিদা বেড়েছে। সেই চাহিদা অনুযায়ী তাঁরা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। আগে যিনি দু’বেলা অন্নের কথা ভাবতেন, এখন তিনি চাকরির কথাও ভাবছেন। “সেই অর্থে যাকে রাম-রাজ্য বলে, তা তো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে খুঁজলেই এবং খোঁচা মারলেই ক্ষোভ বেরিয়ে আসবে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী সতর্ক না-থাকলে যে-কোনও সময়ে জঙ্গলমহলে ঢুকে সেই ক্ষোভকে কাজে লাগাতে পারে মাওবাদীরা,” বলেন এক পুলিশকর্তা।