কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নবান্ন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি নবান্ন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
প্রশাসনিক সূত্রে দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মোট কী পরিমাণে বাহিনী প্রয়োজন, রাজ্যের পুলিশ মোতায়েনের পরেও তাতে ঘাটতি থাকবে কি না, থাকলে কত, কোন কোন জেলা স্পর্শকাতর— এই সমস্ত বিষয় রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখনও হিসাব করে উঠতে পারেনি। তাই তাদের তরফ থেকে হিসাব নবান্নে জমা না পড়লে, বাইরে থেকে বাহিনী আনা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না রাজ্য প্রশাসন। প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, রাজীব সিন্হা রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই ভোট ঘোষিত হয়েছে। তার দিনক্ষণ ঘোষণার আগে জেলা প্রশাসনগুলির সঙ্গে প্রস্তুতি-বৈঠক হয়নি। সব মিলিয়ে, মনোনয়ন পর্ব শুরু হয়ে গেলেও ভোট-প্রস্তুতিতে বিস্তর ফাঁক আছে বলে তাদের দাবি।
এরই মধ্যে এ দিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে সহযোগিতা করতে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিব সঞ্জয় বনশলকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সময় অনুপাতে প্রস্তুতির ফাঁক যে রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে নবান্নের এই ঘোষণায়।
ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা হয়েছিল। তাতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা উচিত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশনেরই।
হাই কোর্টের বক্তব্য ছিল, স্পর্শকাতর জেলায় বাহিনী মোতায়েনে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কিন্তু সেই স্পর্শকাতর জেলা নিয়ে কমিশন কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি। তবে গোলমাল নানা জেলায় হয়েছে। গত দু’দিনে সব জেলাকে ছাপিয়ে গিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সেখানে ক্যানিং এবং ভাঙড়ের গোলমাল নিয়ে প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সূত্রের খবর, মনোনয়ন ঘিরে অশান্তির জেরে জেলাশাসক এবং পুলিশ-প্রশাসনকেও পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করতে বলা হয়েছ। পুলিশ-জেলাগুলিকেও নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
এ দিনই বাকি সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, মনোনয়ন কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজন অনুযায়ী টেবিল এবং কর্মী সংখ্যা বাড়াতে হবে। মনোনয়ন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সেরে ফেলতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রাখতে হবে। প্রসঙ্গত, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মনোনয়নের দিনবৃদ্ধির কোনও বার্তা জেলা প্রশাসনগুলির কাছে পৌঁছয়নি। সেই হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার মনোনয়নের শেষ দিন। সূত্রের খবর, এ দিনই রাজ্য পুলিশের ডিজি নির্দেশ দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং সুষ্ঠু ভাবে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চালাতে পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশের ভূমিকা যাতে প্রশ্নের মুখে না পড়ে, খেয়াল রাখতে হবে সে দিকেও।
এ দিনই রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপির অভিযোগ, বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দেওয়া যাচ্ছে না। একই সঙ্গে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন এবং উপযুক্ত ভোট-নিরাপত্তার বিষয়ে সওয়াল করেছেন সুকান্ত এবং শুভেন্দু। কমিশনের বক্তব্য, মঙ্গলবার পর্যন্ত লাইসেন্স থাকা ৪০০০ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ৬৩ জন।