প্রতাপপুরে তদন্তে পুলিশ।
এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুর গ্রামের ডাঙাপাড়ায়। পুলিশ জানায় মৃতের নাম রফিকুল সেখ (৩৪)। শনিবার সকালে পেশায় ধান ব্যবসায়ী রফিকুলের মৃত্যুতে তাঁর পরিবার ও গ্রামবাসীদের একাংশ পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবি জানায়। ফলে দীর্ঘক্ষণ মৃতদেহ বাড়িতে পরে থাকে। দুপুর বারোটার পরে বহরমপুর থেকে পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হয়। দুপুর একটা নাগাদ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা এক দম্পতিকে আটক করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের অভিযোগ করেছেন মৃতের বাবা হেলাল সেখ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রফিকুল ছিলেন বড়। ১৪ বছর আগে রহিমা বিবির সঙ্গে বিয়ের পরে তিনি গ্রামেই আলাদা থাকতে শুরু করেন। তাঁর অন্য তিন ভাইয়েক সঙ্গে থাকতেন মা রাজিয়া বিবি। রফিকুলের বাবা পাশের গ্রামে থাকতেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, দুটি সন্তানের মৃত্যুর পরে রহিমার সঙ্গে রফিকুলের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রহিমার দাবি, ‘‘সেই সময় থেকেই রফিকুল পাড়ার অন্য একটি মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমাকে মারধর করে বের করে দেয়।’’
এ দিন ভোর চারটের সময় উঠে ট্রাক্টর বের করতে গিয়ে রফিকুলের ভাই আনসারুল ইসলাম তাঁকে ডাকতে যান। সাড়া না পেয়ে মা রহিমা বিবিকে বলে যান। পরে রহিমা নিজেই ছেলেকে ডাকতে যান। সাড়াশব্দ না পেয়ে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে থাকা ছেলের গায়ে হাত দিয়ে বুঝতে পারেন কোনও সাড়া নেই শরীরে। নাক, কান, মুখ দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আছে দেখে এবং গলায় কালশিট দাগ দেখে হেলাল সেখ এ দিন অভিযোগ করেছেন, ‘‘ছেলেকে কে বা কারা খুন করেছে।’’
সকাল দশটা নাগাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রফিকুলের বাড়ির গ্রিলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে একতলা বাড়ির মেঝেতে রফিকুলের মৃত দেহ বিছানার উপর পড়ে আছে। রক্ত জমে আছে চারপাশে। বিছানার উপর অনেক খাতা, ট্যাবলেট পড়ে আছে। একটু দূরে একটি লোহার রড মিলেছে। রফিকুলের বাড়ির উঠোনের সামনে এলাকাবাসীর জটলা।
রফিকুলের মেজ ভাই সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘দাদার ধানের আড়ত ছিল। চার মাস থেকে একা বাড়িতে থাকত। শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ বাইক নিয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখেছিলাম। পরে কখন বাইক নিয়ে বাড়িতে এসেছে জানতে পারিনি।’’
পুলিশ জেনেছে, রফিকুল রাতে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল।
রফিকুলের দেহের পাশে পুলিশ কুকুর।
রফিকুল সেখের ভাগ্নে রাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমার কাছ থেকে থেকে রাত দশটা দশ নাগাদ ধান মিল থেকে নিয়ে আসা দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল মামা। বাড়িতে স্নান সেরে হোটেলে খেতে যাওয়ার সময় ডেকে নেব বলে বেড়িয়ে গিয়েছিল। পরে আর আসেনি। আমিও আর খোঁজ নিইনি। পরে সকালে শুনছি মামা মৃত অবস্থায় বাড়িতে পড়ে আছে।’’
রফিকুলের ভাই সাফিকুল ও আত্মীয় স্বজনদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘অবৈধ সম্পর্কের জেরে প্রতিবেশী হারমান সেখ রফিকুলকে খুন করে থাকতে পারে।’’
এ দিন পুলিশ কুকুরটিও খুনের জায়গা থেকে হারমান সেখের দরজায় গিয়ে বসে পড়ে। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। পরে, পুলিশ হারমান সেখ ও তাঁর স্ত্রী কবিতা বিবিকে আটক করেছে। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে তারা তদন্ত শুরু করেছে।