প্রতীকী ছবি।
একই হাসপাতালের চারতলায় মায়ের দেহ শোয়ানো, নীচতলায় ছোটছেলের দেহ পড়ে রয়েছে। বৃহস্পতিবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল জলপাইগুড়ি। ওই পরিবারেরই আর এক সদস্য, বড়ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে শিলিগুড়ির নার্সিং হোমে ভর্তি। ফলে মা ও ছোটছেলের দেহ দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালে পড়ে ছিল। খবর পেয়ে পরিবারের একমাত্র সুস্থ সদস্য বড়ছেলের স্ত্রী শিলিগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি আসেন দুপুরে। পুরসভার সাহায্যে মায়ের অন্ত্যেষ্টি হয়। ছোট ভাইয়ের দেহ ময়নাতদন্ত হয়নি। আজ, শুক্রবার ময়নাতদন্তের পর অন্ত্যেষ্টি হতে পারে।
জলপাইগুড়ির আনন্দপাড়ার ঘটনা। বড়ভাই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী করোনা আক্রান্ত হন সপ্তাহখানেক আগে। তাঁকে জলপাইগুড়ির কোভিড হাসপাতালে, পরে শিলিগুড়ির নার্সিং হোমে ভর্তি করানো হয়। পরিবারের সদস্য চারজন। বড়ভাই ও তাঁর স্ত্রী, ছোটভাই এবং বৃদ্ধ মা। বড়ভাই আক্রাম্ত হওয়ার পর এলাকায় কন্টেনমেন্ট জ়োন হয়। পড়শিদের দাবি, এর মধ্যে মঙ্গলবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় ছোটভাইয়ের। ওঁর মায়েরও জ্বর ছিল বলে পড়শিদের দাবি। খবর পেয়ে পুরসভার একটি দল এসে অসুস্থ মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তারাই প্রাথমিক পরীক্ষার পর জানায়, ছোটভাইযের মৃত্যু হয়েছে। ছোটভাইয়ের দেহ সারা বেলা বাড়িতেই পড়ে ছিল। সন্ধেয় পুরসভার দলটি হাসপাতালে পৌঁছে দেয় দেহ। মা-ছেলে দু’জনেরই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। কারও সংক্রমণ মেলেনি বলে হাসপাতালের তরফে দাবি। মঙ্গলবার সন্ধে থেকে ছোটভাইয়ের দেহ হাসপাতালেই পড়ে ছিল। পরিজনদের সম্মতির অপেক্ষায় ময়নাতদন্তের কাজ বাকি ছিল। এ দিকে, বড়ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য শিলিগুড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। পড়শিদের দাবি, বৃহস্পতিবার অসুস্থ বৃদ্ধারও মৃত্যু হয়।
জলপাইগুড়ি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন পাপিয়া পাল ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর। তিনি বলেন, “পরিবারের পূত্রবধু একা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। আমরা পুরসভার তরফে এবং পড়শিরা সাহায্যে এগিয়ে যাই। ছোটভাই এবং মায়ের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েনি বলে পরিবারের সদস্যদের হাতে দেহ তুলে দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল হাসপাতাল। পুরসভার তরফে সবরকম সহায্য করা হয়েছে।” অসহায় পরিবারের পড়শি সমরজ্যোতি মুখোপাধ্যায় বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। পরিবারের দু’জন সদস্যের মৃত্যু হয়ে গেল। আমরা পড়শি হিসেবে যতটা সাহায্য করা সম্ভব চেষ্টা করেছি।”