দিঘার সমুদ্রে সাদা ফেনা। —নিজস্ব চিত্র।
দূর থেকে দেখলে মনে হবে বরফ পড়ে আছে। ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে মনে পড়বে দার্জিলিঙের কথাও। কিন্তু একটু মনোযোগ দিয়ে সামনে গিয়ে দেখলে, বোঝা যাবে ওগুলো বরফ নয়। আসলে সমুদ্রের ফেনা! শুক্রবার রাতে এমনটাই ছিল দিঘা সমুদ্র উপকূলের চেহারা। আবহাওয়া দফতর ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, ধেয়ে আসছে আমফান। শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় বাংলা-ওড়িশা উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় প্রায় ১২০ কিলোমিটার বেগে আছড়ে পড়তে পারে। তার আগে দিঘাতে এই ধরনের সাদা সাদা সমুদ্র-ফেনা দেখা দেওয়ায় রীতি মতো সাড়া পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে এই ফেনার কোনও সম্পর্ক আছে কি না বা এটা কোনও অশনিসঙ্কেত কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে উপকূলবর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। কৌতূহল চাপতে না পেরে রাতেই দিঘার সমুদ্রে এই দৃশ্য দেখতে চলে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মানস জানা। তিনি বলেন, “এর আগে দিঘার সমুদ্রে এত সাদা সাদা সাবানের মতো ফেনা কখনও দেখিনি। রীতি মতো অবাক লাগছে। কী করে এমন ফেনা আসছে হচ্ছে তা ভেবে পাচ্ছি না।’’
তবে সমুদ্র বিজ্ঞানী আনন্দদেব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই ঘটনা একেবারেই স্বাভাবিক। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, “লকডাউনের ফলে সমুদ্র এখন অনেকটা দূষণমুক্ত। আগে দূষণের জন্য সমুদ্রের তলদেশের সেডিমেন্ট সমুদ্রের জলের তলার দিকেই থাকত। কিন্তু এখন দূষণ না থাকায় সেই সব উপাদান জলের উপরের স্তরের দিকে চলে আসছে। আর আমফানের প্রভাবে সমুদ্রের উপরে বাতাসের গতিবেগ এখন অনেক বেড়েছে। যার ফলে সেই বাতাসের ধাক্কায় সমুদ্রের জলে উৎপন্ন হচ্ছে ফেনা। যা আছড়ে পড়ছে উপকূলে।’’
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর গতিতে এ রাজ্যের দিকেই ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’
আরও পড়ুন: বাড়ছে না বাসের ভাড়া, নামছে ট্রামের সঙ্গে হাজার অ্যাপ ক্যাব, জানাল রাজ্য
দিঘা অ্যাকুইরিয়ামের অন্যতম আধিকারিক তথা সমুদ্রবিজ্ঞানী প্রসাদচন্দ্র টুডু বলেন, “এটা স্বাভাবিক ঘটনা। আগে সমুদ্রের ঢেউ বা রোলিং কম ছিল। তাই ফেনা কম উৎপন্ন হত। এখন সমুদ্রের জলের সার্কুলেশন অনেক বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের জন্য বেড়েছে সমুদ্রের উপরে বাতাসের গতিবেগ। তাই অনেক বেশি ফেনা বেড়েছে।’’
শুক্রবার রাতের তুলনায় শনিবার সকালে যদিও ফেনা কিছুটা কমেছে। বেলা যত গড়িয়েছে এই ফেনার পরিমাণ আরও কমেছে বলে স্থানীয়দের দাবি। লকডাউন চলায় দীঘা উপকূল এখন কার্যত জনমানব শূন্য। নুলিয়া ও দিঘা উপকূল থানার পুলিশের টহলদারি রুটিন অনুযায়ী চলছে। তবে এই ফেনা দেখার জন্য দুই এক জন অত্যুৎসাহী স্থানীয় বাসিন্দা অবশ্য দিঘা উপকূলে চলে আসছেন। পুলিশ তাঁদের উপকূল থেকে সরিয়ে দিচ্ছে।