বেনজির উদ্যোগ। — নিজস্ব চিত্র।
হাসপাতালে রোগী ভর্তি থাকলে আত্মীয়স্বজনরা অনেকেই প্রার্থনার জন্য দেবতা খোঁজেন। প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালেই সেই ব্যবস্থা থাকে। ছোট, বড় প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালেই কোথাও কৃষ্ণ, কোথাও রাম, কোথাও হনুমান মন্দির দেখা যায়। কিন্তু কোথাও নমাজ পড়ার ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন হাসপাতালের এই ছবি দেখেই নিজের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল হুগলির চিকিৎসক শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। ঠিক করেছিলেন, নিজের হাসপাতালে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের জন্যই প্রার্থনার ব্যবস্থা রাখবেন। সেই ভাবনাই এ বার বাস্তবায়িত হল।
সদ্যই হুগলির কোন্নগরে নিজের হাসপাতালে মন্দির ও নমাজ পড়ার ব্য়বস্থা করেছন শোভন। গড়েছেন মা সারদার মন্দির। তার সঙ্গে রেখেছেন নমাজ পড়ার একটি জায়গা। মুসলিম সম্প্রদায়ের রোগীর আত্মীয়রাও খুশি। তাঁরা নিজের প্রিয়জনের জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছেন সেই নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে। সেখানে সাদা চাদর পেতে রাখা রয়েছে প্রার্থনার জন্য। দেওয়ালে লেখা ‘এখানে নমাজ পড়ুন’।
কোন্নগর ধাড়সা পেট্রোল পাম্প থেকে কিছুটা এগোলেই জিটি রোডের কাছে এই হাসপাতাল। এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত না বলা গেলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাস রয়েছে। পাশের শহর রিষড়ায় যা আরও বেশি। হাসপাতালে মা সারদার মন্দির উদ্বোধন করতে এসেছিলেন, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ। মন্দিরের সঙ্গে নমাজের ব্যবস্থা রাখা নিয়ে সুবীরানন্দ বলেন, ‘‘মা (সারদা) বলতেন, আমি রাখালের মা আবার আমজাদেরও মা। সবাই আমার সন্তান। সেই ভাবনা এখানে ফুটে উঠেছে।’’ সে দিন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব ও বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ-মা সারদার বাণী মাথায় রেখে এমন একটি উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে।’’
শোভন অবশ্য প্রশংসা চাইছেন না। তিনি চাইছেন, এমন উদ্যোগ আরও অনেক জায়গায় হোক। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় প্রত্যেক হাসপাতালেই এখন প্রার্থনার জায়গা থাকে। হাসপাতালের ভেতর রাম মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির, বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চেনা ছবি। এর ফলে অ-হিন্দুরা বঞ্চিত হন বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণ বা মা সারদা সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক। আমি সেই ভাবনাতেই বড় হয়েছি। তাই এই উদ্যোগ।’’ তিনি আরও জানান, আমার এখানে পরিসর কম। ভবিষ্যতে পরিসর বাড়লে নমাজের জন্য বড় জায়গা করা যেতে পারে।