hindu

গনি, ঘনশ্যামের ভুল ভাঙার সহজপাঠ

এই সহজপাঠ নিয়ে পুণে, দিল্লি থেকেও তাঁর ছাত্রেরা যোগাযোগ করছেন। মুসলমান-হিন্দু সহজপাঠের হিন্দি ও ইংরেজি ভাষান্তরও বেরোল বলে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:০৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

গ-য়ে গনি খান, ঘ-য়ে ঘনশ্যাম। বা ত-য়ে তসলিমা, থ-য়ে থাকমণি। কিংবা এ-তে একরাম আলি, ঐ-তে ঐশী পিসি। দুনিয়া জুড়ে নানা টানাপড়েনেও অটুট এক আবহমান বর্ণপরিচয়।

Advertisement

বছরের পর বছর কাছাকাছি থেকেও পরস্পরের মনে ঘাঁটি গাড়ে কিছু ভুল ধারণা। আবার রমজানে বন্ধু গনির বাড়ি ফল নিয়ে যান ঘনশ্যামবাবু। দু’জনের মেয়েরা এক সঙ্গে পুজোয় ঠাকুর দেখতে যায়। খবরের কাগজ হাতে দেশের দশের দূর্দশা নিয়ে একযোগে পা ছড়িয়ে না-বসলে দুই বন্ধুর কারও মনেই শান্তি হয় না। তসলিমা আর থাকমণি, দুই সখীও টের পায় অকালে বিয়ের জন্য চাপ! হিন্দু না মুসলিম,কাদের ঘরে বেশি জলদি বিয়ে হয়? উৎকণ্ঠা আর বেদনার ঐক্যেই দুই মেয়ের বন্ধুতা আরও আঁটোসাঁটো হয়ে ওঠে। ‘মুসলমান-হিন্দু সহজপাঠ’ নামে এক অভিনব সহজপাঠ ঘুরপাক খাচ্ছে সমাজমাধ্যমে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক জুড়ে জাতিবিদ্বেষ উসকে দেওয়া কর্মকাণ্ড নিয়ে দুনিয়া জুড়ে নানা উৎকণ্ঠার পটভূমিতে এ যেন এক উলটপুরাণ। যা চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে, দুই গোষ্ঠীর মান্ধাতার আমলের ধ্যানধারণার নির্মাণকে।

বাস্তবিক রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠের আঙ্গিক ব্যবহার করেই এ দেশে হিন্দু মুসলিম বা সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু সম্পর্কের রসায়ন পড়ার চেষ্টা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শুভেন্দু দাশগুপ্ত এবং তাঁর বন্ধু, চিত্রশিল্পী সোমশংকর। “বছর তিনেক আগে কোনও অশান্তির ঘটনার পটভূমিতে উত্তরবঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির একটি শাখার উৎসাহে, সহজপাঠের আঙ্গিকটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হয়। তখন বই হিসেবে এটা বেরিয়েছিল। অনেকে ভুলেও গিয়েছিলেন। এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে কাজটি নিয়ে আগ্রহ দেখছি”, বলছিলেন শুভেন্দুবাবু। বাংলায় লেখা এই সহজপাঠ নিয়ে পুণে, দিল্লি থেকেও তাঁর ছাত্রেরা যোগাযোগ করছেন। মুসলমান-হিন্দু সহজপাঠের হিন্দি ও ইংরেজি ভাষান্তরও বেরোল বলে!

Advertisement

ছবিগুলো প্রায় সরল রেখায় কয়েকটি সহজ টানে আঁকার চেষ্টা করেছেন সোমশংকর। লেখক ও চিত্রশিল্পী, দু’জনেই রাজনৈতিক কর্মীও। অজ গাঁয়ে ঘোরাঘুরি থেকেই তাঁদের মনে হয়েছিল, যতটা সম্ভব মানুষের মুখের কথায়, পারলে যুক্তাক্ষরের ব্যবহার কমসম রেখেই যদি দরকারি কথাগুলো বুঝিয়ে বলা যায়। এবং সব কথাই যে খুব গম্ভীর তাও নয়, একটা হালকা মজার সুরেরও হদিস মেলে এই নব্য সহজপাঠে। দেখা যায়, গ্রামের মাতব্বর দুদু হোসেন এলাকার এক রাজনৈতিক দলের উঠতি নেতা ধনঞ্জয় চাটুজ্জের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেশ করছেন, কী মশাই আমি না কি পাকিস্তানের চর!

খুব সহজ ভাষাতেই এই সহজপাঠ বোঝাচ্ছে, দেশভাগ হলেও ভারত দেশটা আসলে শুধু হিন্দুর নয়, হিন্দু-মুসলিম বার! এবং এ দেশে আসল লড়াইটা হিন্দু বনাম মুসলিম নয়! শ্রেণি শব্দটা একবারও ব্যবহার না-করে বোঝানো হয়েছে হিন্দু, মুসলিম চাষি, মজুর নির্বিশেষে আসলে লড়াইটা শোষিত বনাম শোষকের। শুভেন্দুবাবুর ইচ্ছে আছে, এই পারস্পরিক সম্পর্কের নিত্য নতুন মোড় নিয়ে আরও কিছু কাজ

করার। তিন বছর আগে লেখার সময়কার যা পটভূমি ছিল এ দেশে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলন, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট বা ও-পার বাংলার অশান্তিকে জোটবদ্ধ প্রতিরোধও তা অন্য চোখে দেখতে শেখাচ্ছে। আবার পাশাপাশি থাকা মানে সব কিছুতে মিশে যাওয়া নয়। খুচখাচ বিভিন্নতার ঠোকাঠুকিতেও কখনও যুগলবন্দি জমে ভাল! সহজপাঠই বলছে, ‘পরিমল গান গায়/ ফকরুল তবলায়/ দু’জনেই মাতোয়ারা / জলসাটা জমে যায়…’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement