মায়ারানি পাল। সাগরদিঘি থানায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
জিয়াগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে ধৃত উৎপল বেহেরা দশমীর দিন তাঁদের বাড়িতে যায়নি বলে জামাইবাবু পুলক সরকার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানের বাসিন্দা পুলক জানান, খুনের ঘটনায় উৎপল জড়িত আগে তার বিন্দুবিসর্গ টের পাননি তিনি। শেষ বার পঞ্চমীর দিন উৎপল ও তার বোন নেহা দু’জনে তাঁর জিয়াগঞ্জের বাড়িতে এসেছিল পুজোর জামাকাপড় দিতে। ফের নবমীর রাতে উৎপল তার বন্ধুদের সঙ্গে জিয়াগঞ্জে প্রতিমা দেখতে এসেছিল। কিন্তু সে দিন বাড়িতে আসেনি। জিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকায় বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বিউটি ও তাঁদের ছ’বছরের শিশুপুত্র অঙ্গনকে খুন করা হয়। ওই ঘটনার সাত দিন পরে ১৫ অক্টোবর পুলিশ উৎপলকে গ্রেফতারের পরেই উত্তেজিত জনতা পুলকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে জিয়াগঞ্জ থানায় নিয়ে গিয়ে রাখে। জিয়াগঞ্জের হত্যাকাণ্ডে পুলকের কোনও যোগ রয়েছে কিনা, তা জানতেই পুলিশ সস্ত্রীক পুলককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে ১৬ অক্টোবর ছাড়া পেয়ে সাগরদিঘির সাহাপুরের শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন পুলক।
তবে শ্যালক উৎপলকে গ্রেফতার করার আগে এই পুলককেই দেখা গিয়েছিল শিক্ষক খুনের ঘটনায় বিজেপির মোমবাতি মিছিলে হাঁটতে। পুলক যে তাঁদের সমর্থক, সে কথা জিয়াগঞ্জ শহর বিজেপি নেতৃত্ব স্বীকারও করেন।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ দিয়ে একা হাতে উৎপল যে তিন জনকে খুন করেছিল তা বন্ধুপ্রকাশের পরিজনদের বোঝানোর চেষ্টা করল পুলিশ। এ জন্য সাগরদিঘি থানায় বন্ধুপ্রকাশের ও বিউটির পরিবারের লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন মুর্শিদাবাদের জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। বন্ধুপ্রকাশের মা মায়া পাল বলছেন, “পুলিশের তদন্তে আমরা খুশি।’’ বন্ধুপ্রকাশের মাসতুতো ভাই বন্ধুকৃষ্ণ ঘোষ বলছেন, ‘‘উৎপল যে নিজে হাতে তিন জনকে খুন করেছে, তার সমস্ত ছবি ও ভিডিয়ো পুলিশ দেখিয়েছে। কিন্তু খুনের পিছনে আরও কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে।’’ একই দাবি বিউটির দাদা সাক্ষীগোপাল মণ্ডলেরও।
পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “তদন্তের বিষয়টি মৃত শিক্ষকের পরিজনদের জানিয়েছি।’’