ধৃত উৎপল বেহেরা। মঙ্গলবার লালবাগ আদালতে। ছবি: মফিদুল ইসলাম
পরনে ফেডেড নীল জিনস আর হলুদ-সাদা চেক শার্ট। শার্টের দুই হাতার বোতাম খোলা। নীল তোয়ালে দিয়ে ঢাকা মুখ।
জনা ছয়েক পুলিশকর্মী বছর কুড়ির যুবককে নিয়ে গাড়ি থেকে নামতেই গুঞ্জন শুরু হল লালবাগ আদালত চত্বরে
—এই ছেলেটিই তিন জনকে খুন করেছে!
—পুলিশ আবার মুখ ঢেকে দিয়েছে কেন?
—কী করে পারল এমনটা করতে!
পুলিশ আঁচ করেছিল আগেই। আর সেই কারণেই জিয়াগঞ্জের লেবুতলা এলাকায় পাল পরিবারের তিন জনকে খুনের ঘটনায় ধৃত উৎপল বেহেরাকে লালবাগ আদালতে আনার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছিল বাড়তি সতর্কতা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুলিশ আদালত চত্বরে পাহারায় ছিল। এ দিন উৎপলকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি আদালতে ঢুকতেই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করা হয়নি। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোর্ট লকআপে।
সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাগের এসিজেএম সুপর্ণা রায়ের এজলাসে। এজলাসে ঢোকার পরেই মেঝেতে বসে পড়ে উৎপল। মুখে জড়ানো নীল তোয়ালে সরিয়ে সে বিচারকের সামনে দাঁড়ায়। এজলাসের সকলেরই নজর তখন উৎপলের মুখের দিকে। তার মুখে ভয়, অনুশোচনার ছাপ ছিল না। সে ভাবলেশহীন তাকিয়ে ছিল।
আইনজীবী বিশ্বজিৎ সাহা লালবাগ মহকুমা শ্যামাসুন্দরী বার অ্যাসোসিয়েশনকে লিখিত ভাবে জানান, অভিযুক্তের হয়ে সওয়াল না করার জন্য। এ দিন বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে কোনও আইনজীবী অভিযুক্তের হয়ে সওয়ালও করেননি। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পুলক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযুক্তের এমন নৃশংস কাজের জন্যই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তবে সাব ডিভিশনাল লিগ্যাল এইডের তরফে অভিযুক্তের জামিনের আবেদন করেন ধ্রুপদ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্তের হয়ে কোনও আইনজীবী না দাঁড়ালে লিগ্যাল এইড থেকে বিনা পারিশ্রমিকে সহায়তা দিতে হয়। সেই কারণেই আমি অভিযুক্তের জামিনের আবেদন করেছিলাম।’’ এ দিন আদালত চত্বরে উৎপলের কোনও আত্মীয়-পরিজনও উপস্থিত ছিলেন না।
এ দিন বিচারক সুপর্ণা রায় অভিযুক্তের চোদ্দো দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। লালবাগ আদালতের সরকারি আইনজীবী আবিদ হাসান বলেন, ‘‘জিয়াগঞ্জে সপরিবার শিক্ষক খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত উৎপল বেহেরার বিরুদ্ধে খুন ও প্রমাণ লোপাটের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র, জুতো, পোশাকও পুলিশ উদ্ধার করেছে।’’