Humayun Kabir

কোনও চ্যাং-ব্যাং ২৭-২৮ বছরের ছেলেরা প্রবীণদের চ্যালেঞ্জ করবে, তা হবে না! থামছেনই না হুমায়ুন

কয়েক মাস আগে হুয়ায়ুনের ‘বিদ্রোহ’ শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার পরে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল দল। তার জবাবও দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে আবার তিনি স্বমহিমায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৭
Share:

হুমায়ুন কবীর। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

হুমায়ুন কবীর থামছেন না। বলেই চলেছেন। বারণ করার পরেও। তিরস্কৃত হওয়ার পরেও।

Advertisement

শুক্রবার কালীঘাটের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নাম করে বলেছিলেন, বেশি কথা তিনি যেন না বলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। দিদির বাড়ি থেকে বেরিয়েই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলার লোভ সামলাতে পারেননি ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। শনিবার ফের তিনি ‘বোমা’ ফাটালেন। সরাসরি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের এক কর্মীর নাম করে হুমায়ুন অভিযোগ করেছেন, ওই কর্মী নাকি ‘তোলাবাজ’! টাকা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্লক সভাপতি ঠিক করে দিচ্ছেন তিনি।

পাশাপাশিই, হুমায়ুনের ক্ষোভ দলের তরুণ প্রজন্মের উপরেও। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও চ্যাং-ব্যাং, ২৭-২৮ বছরের ছেলেরা ৬০, ৬২, ৭০ বছরের নেতৃত্বকে অবহেলা করবে, তাঁদের কর্তৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করবে, ভুল ট্রিটমেন্ট করা, মূল্যায়ন করা, মেনে নেওয়া যায় না। সে সব মানব না!’’ তবে পাশাপাশিই অভিষেকের নেতৃত্ব নিয়ে তাঁর অগাধ আস্থার কথাও খোলাখুলি জানিয়েছেন হুমায়ুন। বলেছেন, ‘‘অভিষেক সত্যিই যোগ্য নেতৃত্ব হয়ে উঠেছেন। তিনি শুধু ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ নন। পাশাপাশি তিনি রাজ্যের ২ নম্বর (নেতা)। মমতার পরেই তাঁকে মানি।’’ এই সঙ্গেই অভিষেকের উদ্দেশে দলীয় বিধায়ক বলেছেন, ‘‘তাঁর কাছে আবেদন, গোটা রাজ্যের মানুষকে সুবিচার, শাসন দিন। উনি যেন কারও কথা শুনে প্রতিহিংসাপরায়ণ না হন।’’

Advertisement

ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘নবীনদের মধ্যে যদি প্রতিভা থাকে, তাঁরা নেতৃত্ব দিতেই পারেন। যেমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর নাম করে তাঁর অফিসের এক কর্মী তোলাবাজি করছেন। নিজে নিজের ব্লক সভাপতি ঠিক করে দিচ্ছেন। তা হলে আমাদের রাজনীতি করার মানে কী?’’ প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহেই রাজ্য জুড়ে ব্লক সভাপতি বদল করেছে তৃণমূল। অনেকের মতে, সেই প্রসঙ্গেই হুমায়ুনের ক্ষোভ রয়েছে। পাশাপাশি হুমায়ুন এ-ও বলেন, ‘‘অভিষেককে আমি নেতা মানি। তাঁর হুইপ মানতেও রাজি। কিন্তু তাঁর নাম করে কেউ অনৈতিক কাজ করবে, সেটা মানা সম্ভব নয়।’’

নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতার কথা জাহির করে হুমায়ুন আরও দাবি করেছেন, দলনেত্রী মমতা তাঁকে দায়িত্ব দিলে তিনি লোকসভা ভোটে বহরমপুরে অধীর চৌধুরীকে দু’লক্ষ ভোটে হারিয়ে দেখাবেন তাঁর জনসংযোগের ক্ষমতা। অর্থাৎ, তাঁকে মুর্শিদাবাদ জেলার দায়িত্ব দেওয়া হোক, এমনই চাইছেন এই বিধায়ক।

শুক্রবার দলীয় বৈঠকে মমতার তাঁকে তিরস্কারের প্রসঙ্গে দৃশ্যতই ‘অবিচলিত’ হুমায়ুনের শনিবারের বক্তব্য, ‘‘তিরস্কারের কোনও বিষয় নয়। যাঁরা অভিভাবক হন, যাঁরা নেতৃত্ব দেন, প্রবাদবাক্য রয়েছে, শাসন করার অধিকার তাঁরই থাকে যিনি ভালবাসেন। সোহাগ করতে জানেন। দিদি আমায় স্নেহ করেন। তাই কোনও সময়ে ভুল করলে বকুনিও দেন। আমি মনে করি, গুরুজনের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। রাজনীতির ময়দানে তিনি গুরুজন। তাঁর কথায় কিছু মনে করি না। তাঁর প্রতি বলার কিছু নয়। যোগ্য নেতৃত্ব বলে মনে করি।’’ কিন্তু পাশাপাশিই হুমায়ুনের বক্তব্য, ‘‘তাঁর (মমতার) ক্ষমতা বা তাঁকে সামনে রেখে কিছু ব্যক্তি মুর্শিদাবাদ জেলায় পাট্টা নিয়ে বসে রয়েছে। তাদের অঙ্গুলিহেলনে আমাদের চলতে হবে!’’

মমতা এবং অভিষেকের প্রতি আস্থা রেখেও অবশ্য হুমায়ুন বলেছেন, তাঁকে চমকিয়ে-ধমকিয়ে লাভ নেই। তিনি বহিষ্কার বা ওই ধরনের শাস্তির ভয় পান না। তাঁর কথায়, ‘‘দল ছাঁটাইয়ে প্রস্তুত আছে। কিন্তু দল ছাঁটাই করবে কি না দলকে ভাবতে হবে। ছাঁটাই করলে কোথায় রাস্তা খুঁজতে হয়, সঠিক মূল্যায়ন করতে হয় আমি জানি।’’

কয়েক মাস আগে হুয়ায়ুনের ‘বিদ্রোহ’ শাসকদলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার পরে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছিল দল। আলাদা করে গিয়ে তৃণমূল ভবনে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন হুমায়ুন। জানা গিয়েছে, শুক্রবারের বৈঠকে হুয়ায়ুনকে সংবাদমাধ্যমের সামনে কম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু তার পরেও হুমায়ুন থামছেন না। এমনিতেই তৃণমূলে নবীন-প্রবীণ, পেশাদার সংস্থার ভূমিকা, বয়সবিধি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাতেই যেন নতুন করে ঘৃতাহূতি দিলেন হুমায়ুন।

এর আগে যখন হুমায়ুন ‘বিদ্রোহী’ হয়ে উঠেছিলেন, তখন তাঁর নিশানায় ছিলেন মুর্শিদাবাদ-বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার তৎকালীন সভাপতি শাওনি সিংহরায়। পরে শাওনিকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে রাজ্যে সম্পাদক পদ দেওয়া হয়। হুমায়ুনের ঘনিষ্ঠেরা সেই সময়ে বলেছিলেন, ‘‘দাদার চাপেই দল শাওনিকে সরাতে বাধ্য হয়েছে।’’ শুক্র এবং শনিবারের পর পাল্টা শাওনি-শিবিরও হুমায়ুনের বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপিং জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে নেমে পড়েছে। তৃণমূলের অনেকের মতে, হুমায়ুন কয়েক মাস আগের কথা মাথায় রেখেই ব্লক সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে ফের ময়দানে নেমেছেন। তবে এ বার আরও আগ্রাসী ভঙ্গিতে। সরাসরি অভিষেকের অফিসের এক কর্মীকেই ‘তোলাবাজ’ বলে আক্রমণ শানিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement