— প্রতীকী চিত্র।
বেপরোয়া গতিতে চললে রাস্তায় পুলিশ ধরে না। ই-চালানের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়। সব সময়ে তা আদায়ও হয় না।
সেই সুযোগই কি কাজে লাগানো হচ্ছে? মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে নিউ টাউনে তিনটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরে তেমনই মনে করছে বিধাননগরের পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানকার দু’টি জায়গায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে সাপুরজি এলাকায় তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে। অন্য ঘটনায় বাগুইআটি থানার অধীন নিউ টাউনেরই গৌরাঙ্গনগরে মোটরবাইকের ধাক্কায় মারা গিয়েছেন এক ওষুধ ডেলিভারি কর্মী। তার আগে বুধবার রাতে নিউ টাউনের আকাঙ্ক্ষা মোড়ে লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ট্যাংরার বাসিন্দা এক যুবকের।
পর পর তিনটি ঘটনায় ঘুম ছুটেছে নিউ টাউনের পুলিশের। তারা জানায়, ম্যাকনেলি দাস (২৬) নামে নদিয়ার বাসিন্দা তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ওই তরুণী বৃহস্পতিবার রাতে দুই বন্ধুর সঙ্গে বাইকে চেপে সাপুরজির দিকে ফিরছিলেন। সাপুরজিতেই তিনি ভাড়া থাকতেন। উড়ালপুল থেকে নামার সময়ে বাইক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় তিন জনেই রাস্তায় ছিটকে পড়েন। পথ বিভাজিকার উপরে পড়ে মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হয় তরুণীর। পুলিশের দাবি, তাঁরা পার্টি করে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন। ফেরার পথে ওই দুর্ঘটনা।
গাড়িচালক, বিশেষত বাইকচালকদের এ হেন আচরণ অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে বলে মনে করছে পুলিশ। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রের খবর, মত্ত অবস্থায় কিংবা অতিরিক্ত গতিতে বাইক কিংবা গাড়ি চালাতে গিয়েই নিউ টাউনের রাস্তায় বিপদে পড়ছেন লোকজন। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখানে রাস্তা চওড়া। সহজে যানজট হয় না। যে কারণে বহু চালক নিউ টাউনের রাস্তায় বিপজ্জনক গতিতে চলতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। অনলাইনে জরিমানা করে, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের’ প্রচার করেও কাজ হচ্ছে না। বহু চালক নিরুত্তাপ।’’
আবার বিশ্ব বাংলা সরণির মতো প্রশস্ত রাস্তা না হওয়া সত্ত্বেও বাগুইআটি থানার অধীন গৌরাঙ্গনগর এলাকায় বাইকের ধাক্কায় বৃহস্পতিবার রাতে লক্ষ্মীনারায়ণ পাত্র (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পুলিশ জানাচ্ছে, বেপরোয়া গতি ঠেকাতে নিউ টাউনের কর্মা ক্রসিং, সেন্ট জ়েভিয়ার্স, সিলিকন ভ্যালি, কারিগর ভবন-সহ ছ’টি মোড়ে স্পিড লিমিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বিপজ্জনক গতি-সহ অন্যান্য ট্র্যাফিক আইন ভাঙার কারণে প্রতি মাসেই ১০-১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত অগস্টে ওই ক্যামেরা বসানোর পরে বেপরোয়া চালকদের খানিকটা নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। কিন্তু বহু চালক, বিশেষত বাইকচালক এখনও বেপরোয়া ভাবেই নিউ টাউনের রাস্তায় চলাচল করেন বলে স্বীকার করছে পুলিশও। গত বছর বাইক-সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিউ টাউনে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এই বছরের প্রথম মাসেই এখনও পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যু হল।
কেন এই বেপরোয়া ভাব? নিউ টাউনের পুলিশ মনে করছে, ই-চালানের মাধ্যমে যত হারে জরিমানা করা হচ্ছে, তত হারে সেই টাকা আদায় হচ্ছে না। যে কারণে ট্র্যাফিক আইন ভাঙার গুরুত্ব বুঝছেন না অনেকেই। রাতের দিকে নিউ টাউনের রাস্তায় বেপরোয়া গতিতে ছুটছে বাইক আর গাড়ি। অভিযোগ উঠছে নিউ টাউনের বহু গাড়ির বিরুদ্ধেও। এমনকি বহু বিশিষ্ট নাগরিক, যাঁরা সরকারি গাড়ি পান, তাঁরা ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলার সময়েও গতির ঊর্ধ্বসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই অবস্থায় নিউ টাউনের রাস্তায় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।