Death

যত খুনখারাপি মহার্ঘ জমি ঘিরে কারবারেই

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ নানা ভাবে যুক্ত এই এলাকার জমি কারবারে। বিপুল টাকার লেনদেন হয়।

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

আমডাঙা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বারাসতের ময়না থেকে আমডাঙার রাজবেড়িয়া, ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের দু’পাশে জমির দাম দেখতে দেখতে পাহাড় চুড়োয় উঠেছে। আর সেই জমি ঘিরে আইনি-বেআইনি লেনদেনে ফুলেফেঁপে উঠেছেন এক শ্রেণির মানুষ। একটি সূত্রের দাবি, রেশন কেলেঙ্কারির অন্যতম মূল অভিযুক্ত বাকিবুর রহমানেরও এই এলাকায় জমি আছে। আমডাঙার তৃণমূল নেতা রূপচাঁদ মণ্ডল খুনের পরে পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জমি নিয়ে টানাপড়েনের জেরেই সম্ভবত মরতে হল তাঁকে।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ নানা ভাবে যুক্ত এই এলাকার জমি কারবারে। বিপুল টাকার লেনদেন হয়। তার বখরা দলের কোন মহল পর্যন্ত পৌঁছয়, তা নিয়ে এলাকায় চর্চা আছে বিস্তর। স্থানীয় সূত্রের খবর, এক দশক আগে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক (পূর্বতন ৩৪ নম্বর) সম্প্রসারণ শুরু হতেই জমির দাম লাফিয়ে বেড়েছে। যদিও জমিজটে আটকে সন্তোষপুর থেকে রাজবেড়িয়া পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। তবুও গাড়ির শো রুম, স্কুল, আবাসন, ধাবা, রেস্তরাঁ, কারখানা তৈরির জন্য এই এলাকায় জমি কিনেছেন বহু ব্যবসায়ী।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানালেন, এক সময়ে বারাসতের ময়নার পর থেকে সন্তোষপুর পর্যন্ত জমি কিনে বাগানবাড়ি তৈরি করতেন অনেকে। বাম আমলে জমিতে বোর্ড ঝুলিয়ে লেখা থাকত, জমি বিক্রির কথা আর যোগাযোগের নম্বর। সেই সময়েও নেতাদের অনুগামীদের মাধ্যমে চলত কেনাবেচা। জমির নিয়ন্ত্রণ ছিল তৎকালীন প্রভাবশালীদের হাতে।

Advertisement

২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও সেই পদ্ধতির বদল হয়নি বলেই স্থানীয়দের দাবি। বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাদের দাবি, দল করতে গেলে টাকার দরকার। সূত্রের আরও দাবি, এমনকি রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়া বাকিবুর রহমানও আমডাঙা এলাকায় জমি কিনেছিলেন চাল-গমের কল, রেশনের আটা তৈরির কারখানা করতে। সাধনপুর ও দাদপুরে ৪১ বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে তাঁর নামে। যদিও পরে ওই জমিতে কিছুই করেননি বাকিবুর।

তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, রূপচাঁদ একা নন, আমডাঙা ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা, জনপ্রতিনিধিরাই এখানকার জমি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। পুলিশ সূত্রের খবর, গত এক বছরে বেশ কয়েক বার জমিজমা নিয়ে বিবাদ হয়েছে। হামলা, মারধর, খুনের ঘটনাও ঘটেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে দলীয় কার্যালয়ে গত এক বছরে বেশ কয়েক বার জমি বিবাদ মেটাতে একাধিক মীমাংসা-বৈঠক হয়েছে।

ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘জমি কেনাবেচার ব্যবসা যে কেউ করতে পারেন। তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। হতে পারে, রূপচাঁদ জমি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তা ওঁর পরিবার বলতে পারবে। আমি বলতে পারব না।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘বাকিবুর রহমান বা অন্য যে কেউ জমিজমা কেনাবেচা করতে পারেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, একটা জনপ্রিয় মানুষকে খুন করতে হবে।’’ এ বিষয়ে স্থানীয় বিধায়ক রফিকার রহমানের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি এ সব জানি না। বলতে পারব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement