আবদুল মান্নানের বিবৃতিতে পিএসি-র চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা। ফাইল চিত্র
বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান। রবিবার এক লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করেছেন তিনি।নাম না করেও সম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করা কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের পিএসি-তে নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অতীতের কিছু উদাহারণ তুলে ধরে। পিএসি-র গঠন থেকে শুরু করে তাঁর নিয়োগ পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে বর্তমানে নিয়োগ নিয়েই মূলত প্রশ্ন তুলেছেন এই প্রবীণ কংগ্রেস নেতা। মান্নান লিখেছেন, ‘‘ওই পদে নিয়োগ নিয়ে যে সব বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তা সবই সাম্প্রতিক। এর ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র কতটা শক্তিশালী হচ্ছে তা ভবিষ্যৎ বলবে।’’
প্রসঙ্গত, চলতি বিধানসভায় পিএসি-র চেয়ারম্যান হয়েছেন মুকুল। বিজেপি পরিষদীয় দলের দাবি, তাঁরা পিএসি-তে তাঁর নাম প্রস্তাবই করেননি। আর শাসকদলে যোগ দেওয়ায় মুকুলকে এভাবেই পুরস্কৃত করেছে তৃণমূল। একই কায়দায় ২০১৬ সালে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের আপত্তি সত্ত্বেও সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়াকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করেন স্পিকার। পরে মানস কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেও তাঁর পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ যায়নি। একই ভাবে মানস রাজ্যসভার সদস্য হয়ে বিধায়কপদে ইস্তফা দিলে, ওই পদে আরও এক দলত্যাগী কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর সিংহকে বসানো হয়। নিজের লিখিত বিবৃতিতে সেকথাই উল্লেখ করেছেন মান্নান।
মান্নান লিখেছেন, ‘‘সংসদীয় পরিচালন নিয়মাবলীতে কোনও কিছুর উল্লেখ না থাকলেও তৃতীয় লোকসভার শেষ পর্যন্ত (১৯৬৭) পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অর্থাৎ শাসক দলের সদস্যকেই চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা প্রথা ছিল। চতুর্থ লোকসভার শুরুতে বিরোধী গোষ্ঠীর দলের মধ্যে থেকে একজনকে পিএসি চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’’ বাম জমানার পিএসি-র চেয়ারম্যান নিয়োগের একটি ঘটনার উদাহারণও দিয়েছেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা। তিনি উল্লেখ করেছে, ২০০১ সালে প্রথমবার তৃণমূল প্রধান বিরোধী দলের স্বীকৃতি পায়। ওই বিধানসভায় শেষবার পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে সদ্য প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে মনোনয়ন দিতে চেয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। কিন্তু বিরোধী দল তৃণমূল ওইপদে ঢাকুরিয়ার বিধায়ক সৌগত রায়কে বসানোর প্রস্তাব দেয়।
ওই কমিটির সদস্য নির্বাচনের জন্য সুব্রতের পক্ষে প্রস্তাবক বা সমর্থক হতে রাজি ছিলেন না কোনও তৃণমূল বিধায়ক। বদলে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উদ্যোগী হয়ে বামফ্রন্ট বিধায়কদের সুব্রতর প্রস্তাবক ও সমর্থক হতে বলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সেই উদ্যোগকে অনৈতিক বলে আখ্যা দিয়ে তা থামিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার। সঙ্গে মান্নান আরও লিখেছেন, তৎকালীন স্পিকার পারতেন কোনও একজন বামফ্রন্টের বিধায়ককে পিএসসি কমিটি থেকে পদত্যাগ করিয়ে শূন্য আসনে সুব্রতকে মনোনয়ন দিয়ে পিএসি-র চেয়ারম্যান করতে। কিন্তু তিনি তা করেননি।