দিলীপ ঘোষের বৈঠকে নেই মুকুল রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
মঙ্গলবার দলের রাজ্য স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেছেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অথচ সেই বৈঠকে অনুপস্থিত বিজেপি-র প্রথমসারির নেতা মুকুল রায়। নেই রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশুও নেই ওই বৈঠকে। যদিও গেরুয়াশিবিরের দাবি, দিলীপের ডাকা বৈঠকে শুভ্রাংশুর উপস্থিত থাকার কথাই নয়। কারণ, তিনি রাজ্য কমিটির সদস্য নন। অনুপস্থিত রাজীবও রাজ্য কমিটির পদাধিকারী নন। কিন্তু তাঁকে দলের বিভিন্ন বৈঠকে ‘বিশেষ আমন্ত্রিত’ হিসেবে ডাকা হত।
মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, কিছুদিন আগে কোভিড থেকে সেরে ওঠায় প্রবীণ এই নেতা ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে চলছেন। তা ছাড়া, তাঁর স্ত্রী-ও গুরুতর অসুস্থ। ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। ঘটনাচক্রে, মুকুল-জায়ার অসুস্থতার সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর পুত্রের ‘নৈকট্য’ এবং একইসঙ্গে বিজেপি-র সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ঘিরেও জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই আবহে দিলীপের ডাকা বৈঠকে মুকুলের অনুপস্থিতি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলেই মনে করছে বিজেপি-র একাংশ।
বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই কার্যত নীরব মুকুল। কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছেন বটে। কিন্তু জয়ের পরেও তিনি বিশেষ মুখ খোলেননি। কোনওক্রমে একদিন বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদে শপথ নিয়ে এসেছেন। সেখানেও তৃণমূলে একদা তাঁর সতীর্থ সুব্রত বক্সীর সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছে। তার পর স্ত্রী-র অসুস্থতা নিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপের সঙ্গে মুকুলের সম্পর্কের ‘শৈত্য’ প্রকাশ্যে এসে পড়েছে। সে কারণেই দিলীপের বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে।
দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব্যসাচী দত্ত। নিজস্ব চিত্র
প্রসঙ্গত, হাসপাতালে মুকুলের অসুস্থ স্ত্রী-কে দেখতে যাওয়ার তালিকায় প্রথম ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ তথা সদ্য সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুকুলপুত্রের পাশে থাকার আশ্বাসও দেন অভিষেক। তার পর থেকেই অভিষেকে আপ্লুত মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু। তাঁর কথাবার্তায় এটা স্পষ্ট যে, বিজেপি নেতাদের চেয়ে তৃণমূলে তাঁর পুরোন সহকর্মীদের তিনি অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যা থেকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে শুভ্রাংশুর সম্ভাব্য ‘ঘর ওয়াপসি’ নিয়ে। যদিও শুভ্রাংশু জানিয়েছেন, এখনই তিনি ওই বিষয়ে কিছু ভাবছেন না। মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলে বাকি পদক্ষেপ নিয়ে ভাববেন। ঘটনাচক্রে, অভিষেকের কিছু পরেই হাসপাতালে যান দিলীপ। তার পরদিন মুকুলকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মঙ্গলবার দিলীপের ডাকা বৈঠক ভার্চুয়াল নয়। বিজেপি-র দফতরে দলীয় নেতাদের সশরীরে উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছিল। সেই বিষয়টিকে সামনে রেখেই মুকুল-ঘনিষ্ঠদের ব্যাখ্যা, সদ্য কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। এই সময়ে তাঁর জনাকীর্ণ স্থানে যাওয়া উচিত নয়। সেই বিধি মানতে গিয়েই বিজেপি-র রাজ্য সভাপতির বৈঠকে গরহাজির রয়েছেন তিনি।