মুকুল রায়।—ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের প্রচারের মতোই মঙ্গলবারের ভার্চুয়াল সভাতেও সারদা, রোজভ্যালি, নারদ-সহ নানা দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল সরকারকে বিঁধলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, সারদা এবং নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মুকুল রায় যে মঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ আসন পান, সেখান থেকে ওই দুই কেলেঙ্কারি বা অন্য কোনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি কি আদৌ কেউ বিশ্বাস করবে?
এ দিন শাহের বক্তৃতা শুরুর আগে ভার্চুয়াল সভার প্রারম্ভিক বক্তা ছিলেন মুকুল। তাঁর পরে বক্তৃতা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, এ সবই শাহ এবং বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুকুলের গুরুত্বের প্রকাশ। যে মুকুল সারদা এবং নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েছেন। অথচ ওই সভা থেকেই শাহ বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের দুর্নীতির সীমা নেই। সে কথা বলতে গেলে ক্লান্ত হয়ে পড়তে হবে। আমার কাছে সব তথ্য আছে। কিন্তু করোনা এবং আমপানের মধ্যেও যে এরা দুর্নীতি করছে, তার জন্য মানুষ এদের ক্ষমা করবেন না।’’ এই প্রেক্ষিতেই তাঁর দাবি, এ রাজ্যে বিজেপি সরকার গড়লে দুর্নীতির অবসান হবে। শাহের কথায়, ‘‘বিজেপি বাংলায় ক্ষমতায় এলে রোজভ্যালি, সারদা চিটফান্ড, নারদ কেলেঙ্কারি, ওয়াকফ দুর্নীতি, ভাইপো ভেট, ত্রিফলা আলো কেলেঙ্কারি, ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি— এ সব কিছুই আর হবে না।’’
কিন্তু শাহ যা-ই বলুন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপির অবস্থানের আন্তরিকতায় সন্দেহ প্রকাশ করছে সব বিরোধীই। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বিজেপির মুখে দুর্নীতি-বিরোধী কথা অর্থহীন। অভিযুক্তদের মঞ্চে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ধরনের কথা মানুষের কাছে হাস্যকর। তাছাড়া, তৃণমূলের কেউ কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়।’’ অন্য দিকে, সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির কথাগুলি কত দিন সত্যি থাকবে, তারা কাকে কখন দলে টানবে, তার ঠিক নেই। অমিত শাহের সভা থেকেই আওয়াজ উঠেছিল, ভাগ মুকুল ভাগ। এখন তিনিই তো শাহের দলের বড় নেতা!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের বক্তব্য, ‘‘দুর্নীতির হিসেব নেবেন বলেছেন শাহ। কিন্তু সারদা মামলা এখনও ঝুলে, নারদ-কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের অনুমতি স্পিকার এখনও দেননি, রাজীব কুমারকে নিয়ে আর হইচই নেই— এগুলোর হিসেব দেবেন কি? তাঁদের গিমিক বাংলার মানুষ ধরে ফেলেছেন।’’