Sisir Adhikari

এ বার সরকারি পদ থেকে সরানো হল শিশিরকে, এলেন অখিল

অধিকারী পরিবারে আবার শাসকের ‘বার্তা’। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) চেয়ারম্যান পদ থেকে এ বার সরানো হল শিশির অধিকারীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ১২:০৮
Share:

গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।

অধিকারী পরিবারে আবার শাসকের ‘বার্তা’। পুত্র সৌম্যেন্দু অধিকারীর পর এ বার পিতা শিশির অধিকারী। সরকারি নির্দেশে সৌম্যেন্দুকে সরানো হয়েছিল কাঁথি পুরসভার প্রধান প্রশাসকের পদ থেকে। অতঃপর দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হল শিশিরকে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শিশিরের জায়গায় আনা হয়েছে রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে। জেলার রাজনীতিতে যাঁর অবস্থান অধিকারী পরিবারের একেবারে বিপরীতে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবার যখন সরকার এবং প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন রাজারহাটের একটি হাসপাতালে শিশির তৈরি হচ্ছেন চোখের ছানি কাটানোর জন্য। অস্ত্রোপচারের অব্যবহিত আগে আনন্দবাজার ডিজিটাল ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করায় শিশির শুধু বলেছেন, ‘‘আমার কোনও অ্যাকশনও নেই। রিঅ্যাকশনও নেই।’’ পক্ষান্তরে, অখিলের বক্তব্য, ‘‘উনি বয়স্ক মানুষ। শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু উনি অনেকদিন ধরেই স্বাস্থ্যের কারণে এবং বয়সের কারণে কোনও কাজ করতে পারছিলেন না। তাই ওঁকে সরিয়ে অন্যদের বসাতেই হত। আমি বলছি না যে, আমাকেই বসাতে হত। কিন্তু উনি অনেকদিন ধরেই কোনও কাজ করতে পারছিলেন না।’’

মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ অখিল আরও জানান যে, ওই বদল সংক্রান্ত সরকারি কোনও চিঠি বা নথিপত্র তাঁর কাছে তখনও পৌঁছয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘শুনছি, চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান বদল করা হয়েছে। আমার কাছে এখনও কোনও সরকারি কাগজপত্র আসেনি। শিশিরবাবু দুটো পদে ছিলেন। জেলা সভাপতি এবং ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান। একটা পদ থেকে সরানো হয়েছে বলে শুনছি। তবে উনি তো অনেকদিন ডিএসডিএ-র কোনও মিটিংও ডাকেননি। ফলে কাজকর্ম অনেক আটকে আছে। সামনে নির্বাচন আসছে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমরা বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কাজকর্ম শুরু করে দেব।’’

Advertisement

তৃণমূলের মুখপাত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের কথায়, ‘‘ওঁর দুই পুত্র দলের নামে অনেক কথা বলেছেন। তাতে তৃণমূলের কর্মীরা দুঃখ পেয়েছেন। তাঁদের মনে একটা ক্ষোভ আছে যে, শিশির’দা তো তাঁর ছেলেদের দল-বিরোধী কথাবার্তচার কোনও নিন্দা করলেন না! যদিও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একেবারেই প্রশাসনিক এবং সরকারি সিদ্ধান্ত। শিশির’দাকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনিও আমায় খুবই স্নেহ করেন। কিন্তু ওঁর বয়স হয়েছে। সে ভাবে কাজ করতে পারছিলেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: বিজেপিকে নাগরিকত্ব-খোঁচা

তবে যে যা-ই বলুন, এটা স্পষ্ট যে, এই অপসারণ কাঁথির অধিকারী পরিবারের কাছে একটি স্পষ্ট ‘বার্তা’। যে বার্তা বলছে, তৃণমূলে থাকলেও একে একে সমস্ত প্রশাসনিক পদ থেকে অধিকারী পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে দেওয়া হবে। বস্তুত, তৃণমূলের অন্দরের খবর, কাঁথির সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশিরকে পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটাও এখন সময়ের অপেক্ষা। সে ক্ষেত্রেও ‘বয়সের কারণ’ দেখানো হবে বলেই খবর। আগামী ১৮ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামে সভা করার কথা। সেই সভায় শিশিরের যে যাওয়ার ইচ্ছা নেই, তা-ও মোটামুটি এখন স্পষ্ট। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর সভায় স্বয়ং জেলা সভাপতি গরহাজির থাকলে তা দলের অন্দরে যে এক অন্য রকমের ‘দোলাচল’ তৈরি করবে, সে সম্পর্কেও সম্যক অবহিত তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই সম্ভবত ওই সভার আগেই শিশিরকে জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। ‘বার্তা’ দেওয়া হতে পারে তমলুকের সাংসদ তথা শিশিরের সেজো পুত্র দিব্যেন্দুকেও।

সে ক্ষেত্রে পিতা-পুত্র কী করবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, শিশির এবং দিব্যেন্দু— উভয়েরই সাংসদ পদের মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তাঁরা দল ছাড়লে দলত্যাগ-বিরোধী আইনে পড়বেন। তাতে তাঁদের সাংসদপদ খারিজ হয়ে যাবে। কিন্তু তৃণমূল তাঁদের বহিষ্কার করলে তাঁরা ‘দলহীন সাংসদ’ হয়ে থেকে যাবেন। এখন দেখার, উভয়পক্ষ কোন কোন পথে হাঁটে।

আরও পড়ুন: ই-স্নানাগারে গঙ্গাসাগরের জল ঢেলেই বাড়ির পথে পুণ্যার্থীরা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement