গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ
তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের হস্তক্ষেপে কুণাল ঘোষ-কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাগ্যুদ্ধে ইতি ঘটেছে। কুণাল টুইট করেছেন ‘চ্যাপ্টার ক্লোজ্ড’ বলে। কিন্তু তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শিবির তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যের টুইট-তিরে বিদ্ধ হলেন কল্যাণ। যা বলছে, কুণাল-অধ্যায় সমাপ্ত হলেও অন্য অধ্যায় এখনও জারি রয়েছে।
তবে কুণাল-অধ্যায়ও যে একেবারে সমাপ্ত, তা-ও নয়। কারণ, ঘন্টাখানেক আগেই আবার কল্যাণ তাঁর ফেসবুকে কবি শ্রীজাতর একটি কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে, বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়, আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়।’ যার প্রেক্ষিতে কয়েক মিনিট আগে কুণাল অতনু দত্তের ‘শিরদাঁড়া’ কবিতাটি তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেছেন!
অন্যদিকে, অদিতি শুধু একটি টুইট করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি একের পর এখ কল্যাণের বিভিন্ন ভিডিয়ো-সহ টুইট করতে শুরু করেছেন। কোনওটিতে কল্যাণ গান গাইছেন। কোনওটিতে নাচছেন ইত্যাদি। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে শীর্ষনেতৃত্বকে আবার হস্তক্ষেপ করতে হতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে।
তৃণমূলের সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের যে বক্তব্য নিয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ সরব হয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গেই তার কয়েক ঘন্টা আগে কল্যাণকে আক্রমণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোনের কন্যা অদিতি গায়েন। কুণাল-অধ্যায় সমাপ্তির পর শুক্রবার অদিতি টুইট করেছেন, ‘বিদ্বেষপূর্ণ মন যে কী কতে পারে, সেটা ভেবেই আশ্চর্য লাগে! অন্য কেউ যখন ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন অস্পষ্ট যুক্তির বেড়াজালে আটকে থাকা মানুষ তা সহ্য করতে পারে না। ডায়মন্ড হারবার মডেল একটি সাফল্য। এটি কারও পছন্দ হতেও পারে বা না হতে পারে।’
অদিতি আরও লিখেছেন, ‘আরও পরিশ্রম এক জন নির্বাচিত প্রতিনিধির অগ্রাধিকার হওয়া উচিত, সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা নয়।’ ওই টুইটের সঙ্গে অদিতি একটি ভিডিয়ো ক্লিপও দিয়েছেন। সেটি গত ২ জানুয়ারি কল্যাণের প্রোফাইলে শেয়ার করা হয়েছে। ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ভিড়ে-ভরা একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার মাঠে সাংসদ হাত নাড়তে নাড়তে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর মুখে অবশ্য মাস্ক রয়েছে। তাঁর আশেপাশে যাঁরা হাঁটছেন, তাঁদের মুখেও মাস্ক। ওই প্রতিযোগিতাটি হুগলির ফুরফুরা ওয়াইএমএ পরিচালিত।
সাম্প্রতিক করোনা স্ফীতিতে দু’মাস রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন অভিষেক। যদিও তিনি সেটি তাঁর ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ বলেই বর্ণনা করেছিলেন। তাকেই কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন কল্যাণ। তখনই কল্যাণের ঘনিষ্ঠমহল থেকে ১ জানুয়ারি ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের উদ্যোগে এমপি কাপের ফাইনালে লোক সমাগমের কথাও বলা হয়েছিল। তারই পাল্টা হিসেবে মুখঅযমন্ত্রীর বোনের কন্যা অদিতি ফুরফুরার ভিডিয়োটি টুইট করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, ইটের বদলে পাটকেল!
প্রসঙ্গত, অভিষেক তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে কোভিড পরীক্ষার কমর্সূচি ঘোষণা করেন। ৩০ হাজার পরীক্ষার লক্ষ্য থাকলেও সে দিন ৫৩ হাজার লোকের কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বস্তুত, তৃণমূলের অন্দরে অভিষেকের কোভিড মোকাবিলাকে ‘ডায়মন্ড হারবার ম়ডেল’ বলে অভিহিত করা শুরু হয়েছে। প্রচারও চলছে। অভিষেকের ‘ব্যক্তিগত মন্তব্য’কে সমর্থন করেছিলেন চিকিৎসক কুণাল সরকার। সে কারণে অভিষেক তাঁকে পাল্টা ধন্যবাদও জানিয়েছেন।