তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। রাবেয়া ও আসনুরা খাতুন এক সঙ্গে হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। রাবেয়া মঞ্চে পৌঁছেও যান। তাতে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। তাতেই শুরু হয়েছে শোরগোল। দুই বোনই এখনও রায়গঞ্জে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের মা মামুদা বেগম জানালেন, রাবেয়া ও আনসুরা এত দিন পঞ্চায়েত, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন দাবি জানাত। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু স্বামীর খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের ফাঁসি, আনসুরার চাকরি, আমাদের সুচিকিত্সার জন্য ওরা এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করে ভুল করেছে।’’
তবে রাবেয়ার ভাই বোনদের দাবি, মরিয়া হয়েই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন আসনুরারা। রাবেয়ার ভাই মহম্মদ সাহাবুদ্দিন ও বোন জুলেখা খাতুনের দাবি, তাঁরা খুব গরিব। টাকা পয়সার টানাটানিতে মাঝে মধ্যেই তাঁদের আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়। টাকার অভাবে মা ও ভাইবোনদের চিকিত্সা করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের বাবার খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরাও এখনও শাস্তি পায়নি। রাবেয়াকে প্রশাসন রায়গঞ্জের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হলেও এখনও নিয়োগ হয়নি। আসনুরারও একটা চাকরির দরকার। তাঁদের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত, প্রশাসন ও পুলিশকে আমরা বারবার এসব সমস্যার কথা জানালেও কোনও লাভ হয়নি। তাই ওইদিন রাবেয়া ও আসনুরা একরকম মরিয়া হয়েই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এসব কথা বলতে চেয়েছিলয় তবে এ ভাবে ওদের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়াটা ঠিক হয়নি।’’
মুখ্যমন্ত্রী জেড প্লাস ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। তারও ফাঁকফোকর গলে হেমতাবাদে মুখ্যমন্ত্রীর সভার মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন রাবেয়া। ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য ও জেলা পুলিশ। রাবেয়া ও আসনুরার ওই কাণ্ড জানার পর হতবাক ছাগলকাটি এলাকার বাসিন্দারাও। তাঁদের পরিবারের লোকেদের এড়িয়ে যাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। তাঁদের কাজকেও এলাকার কেউই সমর্থন করছেন না। প্রতিবেশী মোস্তাফা মহম্মদ, মহম্মদ আলি, শেখ সুফিয়ান ও শেখ ইমাজুদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘রাবেয়া ও আসনুরার জন্য গোটা রাজ্যের কাছে আমাদের গ্রামের বদনাম হয়েছে।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘পরিবারটি খুব গরিব সে কথা ঠিক। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের কোনও দাবি বা অভাব, অভিযোগ থাকলে তাঁরা তা পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে পারতেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার এটা কোনও পদ্ধতি হতে পারে না।’’
রাবেয়ারা নয় বোন ও তিন ভাই। ২০১৫ সালে জমি নিয়ে বিবাদের জেরে তাঁদের বাবা শেখ মোফিজুদ্দিনকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে ১০ জন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অভিযুক্তরা এখন জামিনে মুক্ত। তাঁদের মা মামুদা বেগম প্রতিবন্ধী। তিন ভাই ও পাঁচ বোন বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। পাশাপাশি, তাঁরা তাঁদের পারিবারিক তিন বিঘা জমিতে চাষাবাদও করেন।
এ দিন রাবেয়াদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মামুদা বেগম বাড়ির উঠোনে বসে কাঁদছেন। বাইবোনেদের কেউ রান্না করছেন, কেউ বিড়ি বাঁধার কাজে ব্যস্ত। প্রশাসন এক বছর আগে ওই পরিবারটিকে গীতাঞ্জলি আবাস যোজনায় ঘর তৈরি করে দিয়েছে। এখনও সেই ঘরের ছাদ তৈরি হয়নি।