কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট অব্যাহত রইল শুক্রবারেও। বিচারপতি মান্থার কাছে যাওয়া অধিকাংশ মামলার শুনানিতেই অনুপস্থিত ছিলেন সরকারি আইনজীবীরা। ফলে তাঁর এজলাসে থমকে যায় বিচারপ্রক্রিয়ার কাজ।
হাই কোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ৬০০টিরও বেশি মামলার শুনানি রয়েছে বিচারপতি মান্থার এজলাসে। সকাল থেকে ৩৫টি মামলার অধিকাংশেরই শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন না সরকারি আইনজীবীরা। ফলে শুনানির দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। কিছু মামলায় সরাসরি পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন বিচারপতি। মান্থার এজলাসে বিক্ষোভ দেখানো আইনজীবীদের পাশে রাজ্যের বার কাউন্সিল না দাঁড়ালেও সরকারি আইনজীবীদের একাংশ ঘুরপথে এই বয়কট সমর্থন করছেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীদের একাংশ। শুক্রবার বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কট নিয়ে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার উপর মামলায় হাজির না হওয়ার কোনও নির্দেশ নেই। ওই এজলাসে আমার যে সব মামলা রয়েছে, সেগুলিতে আমি অংশ নিচ্ছি। বাকি সরকারি আইনজীবীরা কেন যাচ্ছেন না, তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।”
গত সোমবার থেকে ঘটনার সূত্রপাত। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। পরে বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের প্রস্তাবও আনেন বার কাউন্সিলের কলকাতা শাখার সদস্যদের কয়েক জন। চলতে থাকে এজলাসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ। থমকে যায় বহু মামলার শুনানিও। এমনকি, হাই কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের দু’টি দলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও দেখা যায়। বৃহস্পতিবার সেই প্রসঙ্গেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আইনজীবীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ভারতীয় বার কাউন্সিল। বারের তরফে মননকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে যা হয়েছে, আমরা দেখেছি। কলকাতার বার কাউন্সিলের তরফে আমরা একটি আবেদনও পেয়েছি। যা ঘটেছে তা এক কথায় অভব্যতা। আমরা মনে করি যাঁরা এ সব করেছেন, তাঁদের প্র্যাকটিস করার অনুমতি পাওয়া উচিত নয়। আরও দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল, যে বার কাউন্সিল আইনজীবীদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে শেখায়, ভদ্র, বিনয়ী এবং সংযত আচরণ করতে শেখায়, তারই সদস্যরা এমন করেছেন।’’
কলকাতা হাই কোর্টে ইতিমধ্যেই আইনজীবীদের বিক্ষোভের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমানার রুল জারি করেন বিচারপতি মান্থা। যার জেরে মামলাও হয়েছে। বার কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খতিয়ে দেখে বিক্ষোভকারীদের নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। মননকুমার বলেন, ‘‘বার এই ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করে না। তাই দিল্লি থেকে ৩ সদস্যের একটি কমিটি যাবে। তারাই বারের অন্যান্য সদস্য, বারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবে। এমনকি, কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের সঙ্গেও কথা বলবে।’’ মঙ্গলবারের মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের ঘটনায় রিপোর্ট জমা দেবে এই তিন সদস্যের দল। ভারতীয় বার কাউন্সিল সিদ্ধান্ত জানাবে বুধবার। তবে প্রয়োজন পড়লে এই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টেও যেতে পারে বলে জানিয়েছে বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া।