তমাল ভট্টাচার্য। ডান দিকে সেই বাস। —নিজস্ব চিত্র
বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেও দেশে ফেরার আশা দেখতে পাচ্ছেন না। সঙ্গে ভারত সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় বিমানবন্দরে ঢুকতেই দিচ্ছে না নিরাপত্তা রক্ষীরা। কাবুল থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে শনিবার রাত ৮টায় ফোনে এমনটাই জানালেন নিমতার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, তিনি একা নন, সঙ্গে রয়েছেন শ’দুয়েক ভারতীয়। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন বাঙালিও রয়েছেন।
আফগানিস্তানের করদান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে চাকরি করেন তমাল। কাবুল শহর তালিবান দখলে চলে যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় বন্দি হয়ে ছিলেন। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে ফেরার চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু একটা বাধা কাটলেও অন্য বাধায় আটকে পড়েছেন তমালরা। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘দূতাবাসে যোগাযোগের পরেই আমাদের উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয় একটি সংস্থার মাধ্যমে। সাতটি বাসে আমরা দু’শো জনের মতো ভারতীয় বিমানবন্দরে এসেছি শুক্রবার রাতেই। কিন্তু এখনও ঢুকতে পারছি না।’’ এর পাশাপাশি তমাল বলেন, ‘‘প্লিজ মোদীজি, অমিত শাহদের আপনারা বলুন। যাতে আমাদের কথা ভেবে দ্রুত কোনও ব্যবস্থা করা হয়।’’
তমাল জানিয়েছেন, শুক্রবার আফগানিস্তানের সময় অনুযায়ী রাত ১১টা নাগাদ তাঁরা বিমানবন্দরের গেটে পৌঁছন। কাবুল বিমানবন্দরের নর্থ গেটে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরেই শুরু হয় সমস্যা। তমাল বলেন, ‘‘আমাদের হাতে কোনও সরকারি নথি নেই। কোনও সরকারি প্রতিনিধিও নেই। এই কারণে বিমানবন্দরে ঢুকতেই দিচ্ছে না আমেরিকার সেনা। এই অবস্থায় আমরা দূতাবাস ও হেল্প লাইন নম্বরে বারংবার ফোন করেছি কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’
শুক্রবার গোটা রাত এবং শনিবার দিনভর বিমানবন্দরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার পরে শনিবার রাতে অবশ্য মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই জোগাড় করতে পেরেছেন তমালরা। বিমানবন্দরের কাছেই অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় এমন একটি বাড়িতে রয়েছেন তাঁরা। আফগানিস্তানের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তমাল ফোনে জানান, ‘‘খালিজ নামে ওই বাড়িটায় থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। আমরা সবাই মিলে ওখানে যাচ্ছি। কী হবে জানি না। তবে কাল সকালে ফের বিমানবন্দরে ঢোকার চেষ্টা করব। আশা করছি, কিছু একটা ব্যবস্থা হবে।’’
আফগানিস্তানে খুব বেশি দিন আগে যাননি তমাল। বিজ্ঞানের ছাত্র তমাল জানিয়েছেন, বিদেশে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। সে কারণেই বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে এই চাকরি নেন। গত ১৫ মার্চ যোগ দেন কাবুলের স্কুলে। ঠিক ছ’মাস চাকরি করার পরেই এই বিপদ। নিমতায় রয়েছেন তমালের বাবা, মা এবং মাসি। তমালের সঙ্গে কথার পরে তাঁর বাড়িতেও আনন্দবাজার অনলাইনের পক্ষে যোগাযোগ করা হয়। তমালের মাসি বীণা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বিপদের কথা জেনেই আমি একটা ই-টিকিট কেটে পাঠিয়েছিলাম। বুধবারের টিকট ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, সেই বিমানটা কাবুল থেকে রওনা দিতেই পারেনি।’’ কাবুল থেকে ফেরার জন্য যেমন উদ্বেগে তমাল ঠিক তেমনই নিমতায় উদ্বিগ্ন পরিবার। দু’তরফ থেকেই বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।