মানিক ভট্টাচার্য এবং তাপস মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ তাপস মণ্ডলের একাধিক ডেরায় শনিবারই হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ বার ইডির নজরে মূলত ১০টি বিএড কলেজ। ইডি সূত্রে খবর, ১০টি বিএড কলেজের মধ্যে অধিকাংশই তাপস মণ্ডলের মালিকানাধীন। এই কলেজগুলি অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দিত কি না বা এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কি না, তা খুঁজে দেখতে চাইছে ইডি। তাপসের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, ইডির চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, মানিক ভট্টাচার্যের ছেলে শৌভিক ভট্টাচার্যের সংস্থা ‘অ্যাকিওর কনসালটেন্সি সার্ভিসে’র সঙ্গে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর একটি চুক্তি হয়। শৌভিকের সংস্থাকে কলেজের উন্নয়নের জন্য টাকা দিয়েছিল রাজ্যের ৫৩০টি বেসরকারি বিএড এবং ডিএলএড কলেজ। ইডির প্রাথমিক তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস- এই সময়ের মধ্যে প্রতিটি কলেজ শৌভিকের সংস্থায় এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। তার বিনিময়ে পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সাহায্য দেওয়ার কথা থাকলেও মানিক-পুত্রের সংস্থা থেকে তেমন কোনও সহায়তা মেলেনি বলে ইডির দাবি। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনও কারণে এই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি শৌভিকের সংস্থায় অর্থ দিত কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছেন ইডি আধিকারিকরা। শৌভিকের সংস্থার অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা।
তদন্তের সূত্র ধরেই বিভাস অধিকারীর সন্ধান পায় ইডি। ইডির তরফে দাবি করা হয়, বিভাসের নামেও বিএড কলেজ আছে। শনিবার বিভাসের কার্তিক বোস লেনের ফ্ল্যাটের বাইরে টাঙানো একটি বোর্ডেই ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’ নামক প্রতিষ্ঠানটির নাম লেখা থাকতে দেখেন ইডি আধিকারিকরা। সংস্থাটির রেজিস্টার্ড নম্বরও উল্লেখ করা ছিল ওই বোর্ডে। রেজিস্টার্ড অফিসের ঠিকানা এপিসি রোড, আইডিয়াল হাইট ব্লক। এই ঠিকানাতেও শনিবার হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। শিক্ষক নিয়োগে এই প্রতিষ্ঠানটির কী ভূমিকা ছিল, তা তদন্ত করে দেখতে চাইছে ইডি।
শনিবার মহিষবাথানে তাপসের ‘মিনার্ভা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র অফিসে হানা দেন ইডির আধিকারিকরা। ইডির দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে এই সংস্থার প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। চাকরিমুখী কোর্স করানোর নামে এই সংস্থা থেকে মোটা অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের অবৈধ উপায়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হত বলে মনে করছে ইডি।
এর পর ইডি আধিকারিকরা শ্রীগোপাল মল্লিক লেনের একটি বাড়িতে হানা দেন। সেখানে এখনও তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ইডি। ইডি সূত্রের খবর, ওই বহুতলের মালিক শৈবাল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ওই বাড়ির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে জনৈক তাপস মণ্ডল ১৯৯২-৯৩ সালে মিনার্ভা এডুকেশনাল অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে একটি কোচিং সেন্টার চালাতেন। পরে একটি ঝামেলার কারণে তাঁকে সেই বাড়ি থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইডি মনে করছে এই একই নামের মহিষবাথানের ট্রেনিং সেন্টারটির মালিকও এই তাপস মণ্ডলই। শনিবার শ্রীগোপাল মল্লিক লেনের বাড়ির মালিক জানতে পারেন, একাধিক জায়গায় নিজের স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে ওই বাড়ির নাম করতেন তাপস। সেই সূত্রেই শনিবার ওই বাড়িতে হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। বারাসতে তাপস মণ্ডলের বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন ইডি আধিকারিকরা। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির। তাপসকে ২০ তারিখ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে ইডি। তাপসের ছেলে জানিয়েছেন, “বাবা ইডির ডাকে সাড়া দিয়ে যাবেন।”