দার্জিলিঙে বন্ধ বিমল গুরুঙ্গের বাড়ির গেট। নিজস্ব চিত্র।
দার্জিলিং আদালতে মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হতেই উত্তরবঙ্গের পাহাড় তো বটেই, তরাই-ডুয়ার্সেও আলোড়ন পড়েছে। পাহাড়ের মোর্চা বিরোধী দল অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ অভিযোগ করেছে, চকবাজার সহ কয়েকটি এলাকায় পোস্টার সেঁটে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। কোথাও বিমল গুরুঙ্গরা গ্রেফতার হলে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে বনধ হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, বনধ তো দূরের কথা, অশান্তি হতে পারে এমন কোনও আন্দোলন এখন হবে না। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে জানান, তরাই-ডুয়ার্সে কোনও রকম অশান্তি মেনে নেওয়া হবে না। তবে আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা জন বারলা বিশদে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
তৃণমূল সূত্রের কবর, দলের দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব চার্জশিট, গ্রেফতারি পরোয়ানার নির্দেশ নিয়ে বিশদে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আদালতে বিচারাধীন বিষয় নিয়ে একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী হিসেবে কোনও মন্তব্য করব না। আইন মেনেই সমস্ত কিছু হবে বলে আশা করছি।’’
দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা শিলিগুড়়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য মদন তামাঙ্গ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আইনের উপরেই আস্থা রাখতে চাইছেন বলে জানান। তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তিনি বলেন, ‘‘কেউ দোষী হলে আইনের পথেই তার বিচার হবে। মদন তামাঙ্গ খুন হওয়ার পরে বিচার চেয়ে আমরাই প্রথম সরব হয়েছিলাম। সত্যিকারের দোষীর শাস্তি চাই।’’
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের সভাপতি তথা বিধায়ক শঙ্কর মালাকার মনে করেন, অপরাধ করলে সাজা পেতেই হবে। । তবে শেষ পর্যন্ত না দেখে কাউকে দোষী বলতে চান না তিনি। এর পিছনে রাজনীতি থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। শঙ্করবাবুর মত, ‘‘আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। তবে গ্রেফতারির বিরুদ্ধে মোর্চা নেতারা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে শুনেছি। গোটা প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলব না।’’ তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে অনেক রকম কারণে অনেক পরোয়ানা জারি হয়। রাজনৈতিক কারণে চাপে রাখতে এমন হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি।
সিপিএমের জলপাইগুড়ির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যও অবশ্য এখনই মন্তব্য করতে নারাজ। তাঁর সন্দেহ, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতির খেলা চলছে কি না তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’’ তবে সিবিআই রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে কাজ করবে বলে আশা করেন তিনি। কংগ্রেসের জলপাইগুড়ির জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদারও রাজনীতি বর্জিত তদন্ত ও সিদ্ধান্ত দাবি করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘‘মদন তামাঙ্গ খুনের মত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত থাকাই উচিত। তবে সিবিআইয়ের অনেক আগে এই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।’’
তবে আপাতত নিরাপদ দূরত্বে থেকে ঘটনার গতির দিকে নজর রাখতে চান যাঁরা, তাঁধের মধ্যে অন্যতম কালচিনির বিধায়ক তথা জয়গাঁ উন্নয়ণ পর্ষদের চেয়ারম্যান উইলসন চম্প্রমারি। তিনি মন্তব্য করেন, আইনের সিদ্ধান্তকে সকলের সম্মান জানানো উচিত। এই ঘটনায় জড়িতদের সকলের কড়়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ সিবিআই ও আদালতের উপরেই বিষয়টি ছেড়ে দিতে চান কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি)-র সভাপতি অতুল রায়। তিনিও সিবিআই তদন্তের উপরে আস্থা রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই নিরপেক্ষ সংস্থা। তাঁরা নিশ্চয় তদন্ত করেই মোর্চার নাম চার্জশিটে রেখেছে। তবে যতক্ষণ চূড়়ান্ত রায় না হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁদের দোষী বলা যাবে না।’’
তবে যতই বিমল গুরুঙ্গ-সহ মোর্চার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক তাঁদের সমর্থন মোর্চার সঙ্গেই রয়েছে বলে জানান বিজেপির দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু। দার্জিলিং জেলা বিজেপি সভাপতি রথীন বসুর বক্তব্য,‘‘চার্জশিট কিংবা গ্রেফতারি পরোয়ানা কারও অপরাধের প্রমাণ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত না দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা ঘোষণা হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মোর্চার পাশেই রয়েছে বিজেপি। আমাদের নৈতিক সমর্থনও রয়েছে তাঁদের সঙ্গে।’’ তবে জলপাইগুড়়ি পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের মোহন বসু বলেন, ‘‘পাহাড়়ে শান্তি নষ্টের চেষ্টা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করেনি ও করবে না।’’